বর্তমান অনলাইনের যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব নতুন করে আর বুঝিয়ে বলার অবকাশ নেই। আর এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং বা ক্লিক ভিত্তিক পিপিসি বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় আপনি কত খরচ করছেন আর সেই খরচ কি উঠে আসছে কি না সেটা জেনে নেয়া জরুরী। তবে আপনার পিপিসি বিজ্ঞাপনকে বাজেট রিলেটেড অপটিমাইজ করার জন্য আপনাকে রীতিমত অভিজ্ঞ হতে হবে। কেননা প্রতিনিয়ত লাখ লাখ মানুষ গুগুলে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, আর তাদের মাঝে নিজেকে অন্যরকম ভাবে উপস্থাপন করতে হলে আপনাকে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে হবে।
বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন ধরণের স্ট্র্যাটেজি ট্রাই করে দেখতে হবে। আজকে এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কীভাবে আপনি পিপিসি ক্যাম্পেইনের বাজেট নির্ধারণ করবেন। এছাড়া বিডিং এর মাধ্যমে কীভাবে অল্প খরচে সবচাইতে কার্যকর ফলাফল অর্জন করতে পারবেন।
যেভাবে বিজ্ঞাপনের বাজেট নির্ধারণ করবেন
১। প্রথমত আপনাকে নিজের বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া বিজ্ঞাপনের পেছনে আপনি কত টাকা খরচ করতে চান সেটাও বেশ জরুরী বিষয়। তবে প্রথমেই ব্যাসিক কিছু আইডিয়া থেকে আপনাকে ছোট আকারে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
আর সেই বিজ্ঞাপন থেকে ডাটা থেকে তথ্য এবং উপাত্তের ভিত্তিতেই আপনি যদি বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন তাহলে আপনার উদ্যোগ বা ব্যবসার ক্ষেত্রে সেটা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। উল্লেখ্য যে এই ধরনের বিজ্ঞাপনকে ডেটা ড্রিভেন মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে, আর বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত এই পদ্ধতি বেশ কার্যকরী হয়ে উঠছে।
এছাড়া আপনি কত টাকা ইনভেস্ট করছেন আর সেখান থেকে কত প্রফিট বের করতে চাচ্ছেন সেটা নিয়েও আপনাকে কিছুটা ধারণা রাখতে হবে। যেমন ধরুন প্রাথমিক ভাবে আপনি দেখলেন যে আপনি যদি ১০০ ডলারের বিজ্ঞাপন দেন তাহলে সেখান থেকে ২৫০ ডলারের পণ্য বিক্রয় হচ্ছে।
পণ্যের খরচ বাদ দিলে দেখা যাবে আপনার লাভ হচ্ছে ৫০ ডলার। এখন তাহলে প্রতি মাসে আপনার যদি ৫০০ ডলার লাভ করতে হয় তাহলে বিজ্ঞাপন দেয়া লাগবে প্রায় ১০০০ ডলারের।
২। দ্বিতীয়ত আপনাকে কিওয়ার্ড রিসার্চের উপর বেশ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। দেখা যাবে আপনি যদি এমন কোন কিওয়ার্ড খুঁজে পান যেটাতে বিজ্ঞাপন দিলে বেশি ফলাফল আসছে তাহলে সেটার প্রতি আপনার মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি যেটাতে কম ফলাফল আসছে সেটার প্রতিও মনোযোগী হতে হবে। কীভাবে কম ফলাফল আসা বিজ্ঞাপনটিকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা যায় সেদিকেও আপনাকে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।
আর তাই কিওয়ার্ড রিসার্চের সাথে যে আপনার বাজেট অর্থাৎ খরচের বিষয়টি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত থাকে। গুগুলের বেশ কিছু ফ্রি টুলস রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি প্রত্যেকটি কিওয়ার্ড প্রতি মাসে কতবার করে সার্চ দেয়া হয় সেই সংখ্যা খুঁজে বের করতে পারবেন। বিশেষ করে আপনার যদি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন এসইও ভিত্তিক বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে এই টুলগুলো বেশ কাজে দিবে।
৩। তৃতীয়ত আপনাকে অবশ্যই ছোট ছোট কিছু বিজ্ঞাপন দিয়ে আগে মার্কেট যাচাই করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যে লোকেশন এবং বয়স অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন সেটা কি আদৌ কার্যকর কি না, তারা কি আপনার পণ্য অথবা সার্ভিসটি ক্রয় করছে কি না সেটা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে।
অনেকেই মনে করে থাকেন, বেশি টাকা খরচ করলে হয়ত বেশি ক্লিক পাওয়া যাবে এবং বেশি সেল পাওয়া যাবে। কিন্তু আদতে সেল করাটাই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং কত অল্প খরচে কত বেশি সেল পাওয়া যায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এতে করে বেলা শেষে আপনার লাভের অনুপাত বৃদ্ধি পাবে।
এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
খরচ বেশি হলে আপনার লাভ কমে যাবে, আবার এমনকি কখনো হতে পারে খরচের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়ে গেলে আপনার লাভ তো হবেই না বরং আপনাকে লসের সম্মুখীন হতে হবে।
৪। বিভিন্ন তথ্য এবং উপাত্তের ভিত্তিতে যেহেতু আপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, তাই এই রিপোর্টিং এনালাইসিস করা আপনাকে শিখে নিতে হবে। আপনার কাছে যদি পিপিসি ক্যাম্পেইনের রিপোর্ট এনালাইসিস একটু বেশি জটিল মনে হয় তাহলে আমাদের ফেসবুক মার্কেটিং সিরিজের, ফেসবুক বিজ্ঞাপনের রিপোর্ট এনালাইসিস এর পর্বটি পড়ে দেখতে পারেন।
হ্যাঁ! হয়ত সরাসরি ফেসবুক এবং গুগুলের রিপোর্টিং সিস্টেমের সরাসরি কোন ধরণের সম্পর্ক নেই। তবে ফেসবুক বুস্টিং থেকে যদি আপনি রিপোর্ট এনালাইসিস করতে পারেন তাহলে আপনার পুরো বিষয়টির উপর ধারণা চলে আসবে।
আপনি বুঝতে পারবেন কীভাবে বা কোন কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আপনাকে রিপোর্টগুলো এনালাইসিস করতে হবে।
৫। এরপর অংকের উপর আপনার মোটামুটি দখল থাকতে হবে। হয়ত একটু অবাক হচ্ছেন আর ভাবছেন যে, গুগুলের বিজ্ঞাপনের রিপোর্টিং এর সাথে অংকের কি সম্পর্ক? আদতে কত ইম্প্রেশনে কত ক্লিক পড়ল আর কত ক্লিকে কত সেল হল এই পুরো বিষয়গুলো কিন্তু আপনাকে গণনা করার মাধ্যমে অর্থাৎ অংকের মাধ্যমে বের করতে হবে। এছাড়া লাভ ক্ষতির হিসেব করতে গেলে তো আপনাকে অবশ্যই যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখতে হবেই।
বাজেট ভিত্তিক ক্যাম্পেইনগুলো আলাদা করে রাখুন
আপনার কম বাজেটের বিজ্ঞাপনগুলো এবং সেগুলোর এড গ্রুপ একটি ক্যাম্পেইনের মধ্যে সেট করে নিন। এভাবে বিভিন্ন বাজেট ভিত্তিক যদি আপনি আলাদা করে বিজ্ঞাপন সেভ করে রাখেন তাহলে পরবর্তীতে বাজেট বৃদ্ধি অথবা কোন ধরণের বাজেটে কীভাবে বিজ্ঞাপন দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় সেটা খুব সহজে বের করতে ফেলতে পারবেন।
এছাড়া আপনি চাইলে কিওয়ার্ড ভিত্তিক ক্যাম্পেইনগুলো আলাদা করে রাখতে পারেন। কেননা পরিশেষে কিওয়ার্ড রিসার্চের উপর ভিত্তি করে যেহেতু আপনাকে বাজেট নির্ধারণ করতে হবে, তাই কিওয়ার্ড ভিত্তিক ক্যাম্পেইনগুলো সেভ করে রাখলে আপনার রিপোর্ট এনালাইসিস বেশ সহজ হবে।
পিপিসি বিডিং কি এবং কীভাবে কাজ করে?
ফেসবুক, ইয়াহু, বিং সহ অন্যান্য আরো অনেক বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের মত গুগুলের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও আপনাকে বিডিং করতে হবে কোন নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডে বিজ্ঞাপনের জন্য। যেমন ধরুন আপনি “সেরা জুতা” কিওয়ার্ডের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে ইচ্ছুক। এখন এই কিওয়ার্ড থেকে ক্লিকের জন্য কত টাকা খরচ করতে হবে সেটা কিছুটা নির্ভর করে আপনার কম্পিটিটরের উপর।
অর্থাৎ একই কিওয়ার্ডে কতজন মানুষ বিজ্ঞাপন দিতে চাচ্ছে এবং তারা কত টাকা খরচ করছে। এভাবে কমপিটিটর কম থাকলে আপনার খরচ কম হবে এবং কম্পিটিটর বেশি থাকলে খরচ বেশি হবে। তবে এই বিডিং এর ক্ষেত্রে আপনি সর্বচ্চ কত টাকা খরচ করতে চান সেটা নির্ধারণ করে রাখতে পারেন।
তখন যারা বেশি টাকা দিতে ইচ্ছুক এবং একই সাথে তাদের কোয়ালিটি স্কোরও ভালো তাদের বিজ্ঞাপনটি আগে দেখানো হবে। তাদের বিজ্ঞাপন দেখানো শেষ হলে এই কিওয়ার্ডে যদি কোন স্লট খালি থাকে তাহলে আপনার বিজ্ঞাপন দেখানো হবে না হলে দেখানো হবে না।
এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
এক্ষেত্রে আপনাকে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, অনেকে মনে করে থাকেন যে বেশি বিডিং করলেই বেশি ক্লিক পাওয়া যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা, আপনার বিজ্ঞাপনের কোয়ালিটি স্কোর এখানে বেশ বড় একটি ভূমিকা পালন করে থাকে।
এভাবে বিডিং এবং কোয়ালিটি স্কোরের একটি চমৎকার সমন্বয় যদি আপনি করে ফেলতে পারেন তাহলে আপনার বিজ্ঞাপনটি সবথেকে ভালো ভাবে কাজ করবে। তবে খুব সহজেই এই বিজ্ঞাপনের কোয়ালিটি স্কোর এবং বিডিং এর সমন্বয় আপনি করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আপনাকে দীর্ঘ প্র্যাকটিস এবং রিসার্চ করতে হবে।
অটো বিডিং
গুগুলের একটি অটো বিডিং সিস্টেম রয়েছে। অর্থাৎ আপনার কোয়ালিটি স্কোর বিবেচনা করে গুগুল নিজ থেকেই অন্যান্য কম্পিটিটরদের খরচের সাথে সমন্বয় করে আপনার থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে রাখবে। আপনি বিডিং এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি এক্সপার্ট না হয়ে থাকেন তাহলে প্রাথমিক ভাবে কোয়ালিটি স্কোরের দিকে বেশি লক্ষ্য রাখুন এবং গুগুলের অটো বিডিং অপশনটি চালু করে দিতে পারেন।
আবার এই অটো বিডিং এর জন্যও অনেক ধরণের স্ট্র্যাটেজি রয়েছে, যেগুলো আপনি ফলো করতে পারেন। একে ধরণের স্ট্র্যাটেজির আবার আলাদা উদ্দেশ্য রয়েছে।
পরিশেষে আপনার কাছে অনেকগুলো ছোট ছোট বিজ্ঞাপনের যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য এবং উপাত্ত থাকবে তখন এই তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে খুব চমৎকার ভাবে এবং কার্যকর ভাবে আপনি গুগুলের সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং অর্থাৎ পিপিসি ক্যাম্পেইন করতে পারবেন।
আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন অথবা নিজের ব্যবসার জন্য নিজেই বিজ্ঞাপন দিয়েন থাকেন উভয় ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে সফল একজন মার্কেটার হয়ে উঠতে পারবেন।