ফ্রিল্যান্সার আইডি! নামটা শুনেই নড়ে চড়ে বসেছেন দীর্ঘদিনের ফ্রিল্যান্সাররা, যারা এতদিন বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করে আসছেন। এবার হয়ত অবশেষে মিলতে চলছে সরকারি স্বীকৃতি। আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার, এই কথাটি এখন থেকে আপনার আইডি কার্ডই প্রমান করে দেবে।
কিন্তু আদতে এই ফ্রিল্যান্সার কার্ড (Freelancer ID Card Bangladesh) বা অনেকেই যাকে বলছেন আইডি কার্ড, এটা আদতে কি? এই আইডি কার্ড কি সব ফ্রিল্যান্সারদের করতে হবে? আর এই আইডি করলে আপনি কি ধরনের সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন?
জেনে নিন অনলাইনে টাকা ইনকামের উপায় গুলো
হ্যাঁ! আপনাদের এই সমস্ত হাজারো প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকে আমাদের এই আয়োজন। সরকার থেকে দেয়া হচ্ছে এই আইডি কার্ড, যার মাধ্যমে আপনি ও আপনার পেশা উভয়ই পাচ্ছেন সরকারি স্বীকৃতি।
ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড কি? Freelancer ID Card from Bangladesh Govt.
আদতে এটা হল একটি পরিচয় পত্র। এর আগে আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং জগতে আছি, তাদের বিভিন্ন সময় পাসপোর্ট অথবা ন্যাশনাল আইডি কার্ডে নিজের পেশা হিসেবে দেয়ার মত কিছুই থাকত না। অন্তত সেই কষ্ট থেকে মিলবে মুক্তি! আর অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা ধীরে ধীরে বলছি। প্রথমত যেহেতু এই আইডি কার্ডটি সরকার থেকে দেয়া হচ্ছে, তাই আশা করা যায় যে সরকারি নানাবিধ সুযোগ সুবিধা এই আইডি কার্ডধারিরা পেতে যাচ্ছেন।
আর আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আমাদের “ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে শুরু করবো?” শীর্ষক আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। এছাড়া আরেকটি সমস্যার সম্মুখীন অনেক ফ্রিল্যান্সাররাই হয়ে থাকেন, আর সেটা হল কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে কাজ করে টাকা ব্যাংকে নিয়ে আসতে হবে।
বর্তমানে অনেকেই পেয়োনিয়ার কার্ডের মাধ্যমে বাইরে থেকে টাকা নিয়ে আসেন। তবে আশা করা যাচ্ছে যে, সরকার যেহেতু ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজ করছে, তাই অতি দ্রুত ফ্রিল্যান্সারদের কাছে আরো কিছু অপশন চলে আসবে।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড কিভাবে করব? Freelancer ID card registration in Bangladesh
এই আইডি কার্ডটি যদি আপনি পেতে চান তাহলে প্রথমত আপনাকে এর জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিট্রেশন করার জন্য সরকারের https://freelancers.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রথমে আপনি যাবেন। আর সরাসরি আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার আইডি রেজিস্ট্রেশন পেজে চলে যেতে চান, তাহলে এখানে ক্লিক করুন—ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড রেজিস্ট্রেশন।
সেখানে ক্লিক করলে নিম্নরূপ একটি পেজ আপনি দেখতে পাবেনঃ
এখানে দেয়া খালি যায়গাগুলোতে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি দিয়ে ফিলআপ করুন। এরপর সাইনআপ বাটনে ক্লিক করুন। আপনার ইমেইলে ভেরিফিকেশন মেইল চলে যাবে। সেখানে যে লিংক পাবেন, সেই লিংকে ক্লিক করলে আপনার ইমেইল আইডি ভেরিফিকেশন হয়ে যাবে এবং একই সাথে আপনি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন এবং নিম্নের পেজটি ওপেন হবেঃ
উপরে বাম পাশের কর্নারে দেখতেই পাচ্ছেন, ফ্রিল্যান্সার আইডি নামক একটি বাটন রয়েছে। সেখানে ক্লিক করার সাথে সাথে একটি আবেদন ফ্রম ওপেন হবে। সেই ফর্মটি ফিলআপ করে নিন। এই ফর্ম পুরনের সময় আপনাকে যে তথ্যাবলি দিতে হবে সেগুলো হলঃ
** নাম, জন্ম তারিখ
** ন্যাশনাল আইডি
** ইমেইল আইডি, মোবাইল নাম্বার এবং ঠিকানা
** আপনার আয়ের একটি বিস্তারিত বিবরণ
** আপনার কাজের যোগ্যতার রেটিং প্রদান করতে হবে
** সবশেষে আপনার একটি ছবি প্রদান করতে হবে। আর ছবিটি যেন কিছুদিনের মধ্যেই তোলা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড রেজিস্ট্রেশনের মোট ধাপ রয়েছে চারটি। এই চারটি ধাপ শেষ হলে আপনার ইমেইলে পরবর্তীতে কি করতে হবে সেটা জানিয়ে দেয়া হয়ে। আইডি কার্ড রেজিস্ট্রেশনের জন্য সামান্য একটি চার্জ রাখা হবে এবং সেই প্রক্রিয়া আপনি ইমেইলের মাধ্যমেই জানতে পাবেন।
আপনার পেমেন্ট পরবর্তী প্রায় সাতদিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি শেষ হতে।
উল্যেখ্য যে, আপনি যদি কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে থাকেন, তাহলে সেই মার্কেটপ্লেস কি কাজ করেন এইস বিস্তারিত জানাতে হবে। বর্তমানে ফাইভার অন্যতম একটি মার্কেটপ্লেস। ফাইভার কি এবং ফাইভার মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজ করবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
এরপর ict division থেকে একজন আপনাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে সকল তথ্য ভ্যারিফাই করে নিবে। এই ভ্যারিফিকেশনের সময় আপনার কম্পিউটার স্ক্রিন শেয়ার করতে হতে পারে।
কেননা আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে শেয়ার করার মাধ্যমেই আপনার ফ্রিল্যান্সিং সম্পৃক্ত তথ্য ভ্যারিফিকেশন করা হবে।
আপনার প্রদান করা যাবতীয় তথ্য যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনার ভার্চুয়াল আইডি কার্ডটি দিয়ে দেয়া হবে। আপনি এই সাইটেই লগইন করার মাধ্যমে এই আইডি কার্ড একসেস করতে পারবেন।
সেখান থেকে আপনি চাইলে এই কার্ডটি প্রিন্ট করে নিজের সাথে আইডি কার্ডের মত রাখতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন।
ict division প্রদত্ত ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড থেকে আপনি কি ধরণের সুযোগ সুবিধা পাবেন
প্রথমত বলে নেয়া ভালো যে আইডি কার্ডটি পেতে হলে আপনাকে ১৫০০ টাকার মত খরচ করতে হবে। তবে এই খরচ করার পরে আপনি হয়ত অবশ্যই বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পেতে পারবেন। তবে এই ১৫০০ টাকা কিন্তু আপনাকে প্রতি বছর আইডি কার্ড নবায়ন চার্জ হিসেবে প্রদান করতে হবে।
আপনি হয়ত ইতোমধ্যেই জানেন যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সারদের কোন ধরণের ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করতে হবে না। তবে যাবতীয় তথ্যাবলি প্রমান করতে গেলে আপনাকে যে ঝক্কি পোহাতে হয়, সেই সমস্যার সমাধান হিসেবে এই আইডি কার্ডটি বেশ কাজে দিবে।
আপনি নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রমান করতে হবে যে কোন ব্যাংক অথবা অন্যান্য সব যায়গায় এই আইডি কার্ডটি দেখাতে পারবেন।
এছাড়া আরো একটি ব্যাপার আপনার জানা থাকা ভালো যে, বিগত এক বছরে আপনি যদি ১০০০ ডলার পর্যন্ত ইনকাম না করে থাকেন তাহলে আপনি এখান থেকে আইডি কার্ডটি পাবেন না।
অনেক বেশি ইনকাম করার জন্য ফ্রিল্যান্সিংগুলোর মধ্যে এফিলিয়েট মার্কেটিং অন্যতম। অনেকেই চিন্তা করেন যে এফিলিয়েন্ট মার্কেটিং কি আদতে ফ্রিল্যান্সিং কি না? আপনি যদি এফিলিয়েন্ট মার্কেটিং সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
এছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং শিখেও আপনি ভালো ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। এমনকি ফেসবুক মার্কেটিং এর উপর যদি আপনার ভালো দখল থাকে তাহলে আপনি সেই জ্ঞান দিয়েও ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
সুবিধা বলতে যেয়ে অসুবিধার কথা শুনে একটু হতাশ হচ্ছেন কি? অবশ্য আপনাকে নুন্যতম ১০০০ ডলার ইনকাম করতে হবে এই আইডি কার্ড পেতে হলে। একই সাথে এই ইনকামের ট্যাক্স যদি আপনি মউকুফ করতে চান তাহলেও এই আইডি কার্ড আপনাকে অনেক ধরণের সুযোগ সুবিধা দিবে। কেননা এর মাধ্যমে আপনি সরকার হতে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন।
পরবর্তীতে হয়ত ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড বা লোন পেতে হলে এই আইডি আপনাকে বেশ সুযোগ দিতে পারে।
এছাড়াও পাসপোর্ট করার সময় আপনি যদি নিজের পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই আইডি কার্ড প্রদানের মাধ্যমে নিজের পেশার প্রমান দিতে পারবেন।
ঠিক একই রকম ব্যাংক একাউন্ট, ভিসা , ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করানোর সময়ও আইডি হিসেবে এই কার্ড আপনি প্রদান করতে পারবেন।
এছাড়া ব্যাংক লোন বা ক্রেডিট কার্ড নেয়ার সময় আপনার ইনকাম সার্টিফিকেট হিসেবেও চাইলে এই আইডি কার্ডটি আপনি দেখাতে পারবেন। এছাড়া সবচাইতে মজার বিষয় হল, এই আইডি কার্ডটি আপনার করা থাকলে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে যত ইনকাম আপনি বাইরে থেকে নিয়ে আসবেন, সরকার থেকে আপনাকে ১০% বোনাস প্রদান করা হবে।
আবার আপনি যখন দীর্ঘদিন ধরে এই ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ড ব্যবহার করবেন, তখন অবশ্যই সরকার কর্তৃক পরবর্তীতে ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে যে কোন ধরণের প্ল্যানিং করার সময় অবশ্যই আপনি সব ধরণের অগ্রাধিকার পেতে পারবেন।
যেহেতু এটি একটি সরকারি প্রক্রিয়াধীন আইডি কার্ড, তাই আপনি পরবর্তীতে অনেক ধরণের সরকারি সুযোগ সুবিধা হয়ত পেতে পারবেন। আর যদিও সোশ্যাল মিডীয়ায় অনেকদিন ধরেই একটি মজার বিষয় ঘুরাফেরা করছে যে, বিয়ের বাজারে ফ্রিল্যান্সারদের তেমন দাম নেই।
এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে বিয়ের বাজারে হয়ত আপনার অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। পাত্রীর বাবার কাছে আপনি সগর্বে নিজের ফ্রিল্যান্সার পরিচয় প্রদান করতে পারবেন। এমনকি চাইলে ইনকাম সার্টিফিকেটের বদলে এই আইডি কার্ডও ধরিয়ে দিতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ড হেল্পলাইন
আপনার এই আইডি কার্ড সম্পৃক্ত যে কোন ধরণের প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন Contact Us – Freelancers Bangladesh এই লিংকে যাওয়ার মাধ্যমে। এখানে ইমেইল রয়েছে এবং একই সাথে নাম্বার রয়েছে, কে কোন মাধ্যমেই আপনি যোগাযোগ করতে পারেন।
আশাকরি আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড সম্পৃক্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। তাহলে আর দেরী কেন? আপনি যদি বিগত এক বছরে ১০০০ ডলার আয় করে থাকেন, তাহলে এখনই ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড রেজিস্ট্রেশন করে নিন। সরকারি অনেক ধরণের সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাবেন।
বর্তমানে অনেকেই আউটসোর্সিং পেশার সাথে জড়িত এবং এখান থেকে ইনকাম করছেন। আপনি যদি আউটসোর্সিং সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।
এই সম্পৃক্ত আরো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য।