বর্তমান ডিজিটাল যুগে বিজ্ঞাপনের এক অনন্য মাধ্যম হল ভিডিও ! তাই সার্চ ইঞ্জিনে ভিডিও র্যাংক করানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভিডিও শুধুমাত্র আপনার কন্টেন্টকেই অনেক আকর্ষণীয় করে না বরং সঠিক ভাবে এসইও করে ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমে আপনার র্যাংকও বৃদ্ধি করে।
আর প্রতিনিয়তই যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ব্লগগুলোতে ভিডিও আপলোড হচ্ছে, সেখানে আপনি যদি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি না করেন তাহলে আপনার বিজ্ঞাপন অনেকাংশেই অকার্যকর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া বর্তমানে প্রায় ৬২ শতাংশ সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং ভিডিওর উপরে নির্ভর করে থাকে।
আকর্ষণীয় এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
তাই বর্তমান এই ভিডিও কন্টেন্টের যুগে, আপনি কিভাবে নিজের ভিডিও অন্যান্য সবার থেকে একটু আলাদা করে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করাতে পারবেন ? আসুন জেনে নেই সেই এসইও ট্রিকসগুলো, যেগুলো মেনে চললে আপনি খুব সহজেই নিজের ভিডিও র্যাংক করাতে পারবেনঃ
১। ভিডিওতে ক্যাপশন যোগ করুন
আপনার ফোন যখন সাইলেন্ট মুডে থাকে তখন কোন ভিডিও দেখে সেই ভিডিও সম্পর্কে বুঝা খুবই মুশকিল হয়ে পরে। আর ঠিক তাই আপনার ভিডিওতে যদি ক্যাপশন দেয়া থাকে তাহলে শুধু সেই ক্যাপশন দেখেই ভিডিও সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পাওয়া যায়। এছাড়া যাদের শ্রবণ শক্তিতে সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য আপনার ভিডিওর ক্যাপশন দেখে সেই ভিডিও সম্পর্কে জানা এবং বুঝতে পারা সহজ হয়ে উঠে।
অপরদিকে, ক্যাপশন শুধুমাত্র আপনার ভিউয়ারদেরই সহজে ভিডিও সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে তা নয় বরং গুগুল সার্চ ইঞ্জিনও এই ক্যাপশনের মাধ্যমে আপনার ভিডিও এর বিস্তারিত সম্পর্কে জানতে পারে। আর তাই ক্যাপশন সহকারে ভিডিও আপলোড করলে আপনার ভিডিও খুব দ্রুত র্যাংক করতে পারে।
২। নিজের সব চাইতে সেরা ভিডিওটিকে প্রাধান্য দিন
সাধারনত গুগল প্রতি পেজে একটি ভিডিওকে লিস্ট করে থাকে। আর তাই প্রতি পোস্টের মধ্যে একটি ভিডিও যোগ করলে সেতা র্যাংক করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অনেক বেশি ভিডিও যদি প্রতি পোস্টে যোগ করা হয় তাহলে সেই ভিডিওগুলো সাধারনত র্যাংক করে না।
আর তাই আপনার সবচাইতে সেরা যে ভিডিওটি সেটিকে প্রত্যেকটা পোস্টের মধ্যে প্রাধান্য দিতে হবে। এছাড়া ভিডিও যেন মোবাইল ফ্রেন্ডলি হয় এবং লোডিং স্পিড অনেক কম থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
আবার আপনার ভিডিও যদি অনেক মান সম্পন্ন হয়ে থাকে তাহলে সেটি র্যাংক করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আর অবশ্যই ভিডিও আপলোড দেয়ার সময় টাইটেল, ট্যাগ, ডেসক্রিপশন এবং ক্যাপশন সহকারে আপলোড দিবেন। এগুলোর মাধ্যমেই গুগল বুঝতে পারবে আপনার ভিডিওটি ঠিক কিসের উপর।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ
ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার আগে যে যে বিষয় গুলো মাথায় রাখা উচিত
আবার গুগল আপনার ভিডিওর টাইটেল, ডিসক্রিপশন এবং ক্যাপশনের সাথে আপনার ওয়েবসাইট সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া আপনার ভিডিওটি সবাই কতটা পছন্দ করছে সেটার উপরেও অনেকটা নির্ভর করে ভিডিওটি র্যাংক হবে কি না। আর তাই ভিডিও যাতে HD quality’র হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন এবং ভিডিওতে ভয়েস থাকলে সেটাও যাতে খুব চমৎকার ভাবে শোনা যায়।
৩। একটি চমৎকার থাম্বনাইল ভিডিও র্যাংক করাতে সাহায্য করে
যদিও একটি বইয়ের কাভার দেখে সেই বই সম্পর্কে মূল্যায়ন করা উচিৎ নয়, তবে বর্তমান সময়ে থাম্বনাইল পছন্দ হলে অনেকেই ভিডিওটি দেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকেন। ভিডিও এর থাম্বনাইল যদি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হয় তাহলে সেই ভিডিওর ভিউও ঠিক ততটাই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
একটি ভিডিও সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা যদিও টাইটেল থেকে পাওয়া যায় তবে সেই ভিডিওটি কতটা সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে তা বেশীরভাগ সময় থাম্বনাইল দেখেই বুঝা যায়। আর যদি আপনার ভিডিওতে বেশি ভিউ হয় তাহলে গুগল বুঝতে পারবে এই ভিডিওটি মানুষ অনেক বেশি পছন্দ করছে এবং সার্চ ইঞ্জিনেও সেটা র্যাংক করবে।
ভিডিও থাম্বনাইল কখনো অটো সিলেক্ট করতে দিবেন না, তাহলে ভিডিও এর যে কোন একটি ফ্রেম অটো থাম্বনাইল হয়ে যাবে। আর হয়ত তখনা ভিউয়ার বুঝতেও পারবেন না ভিডিওটি কেমন আর সেই থাম্বনাইল তাকে তেমনভাবে আকর্ষণও করবে না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেই সব ভিডিও এর থাম্বনাইলে মানুষের ছবি থাকে সেই ভিডিওগুলো ত্রিশ শতাংশ বেশি ভিউ হয়ে থাকে। আর তাই আপনার ভিডিওর জন্য এমন একটি ফ্রেম সিলেক্ট করুন অথবা থাম্বনাইল তৈরি করুন যাতে মানুষ সেই থাম্বনাইল দেখেই ভিডিও সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে থাকে।
৪। ভালো কন্টেন্টের মাধ্যমে ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে
যে কোন ভালো একটি ভিডিও এর প্রাথমিক উদ্যেশ্য থাকে সেই ভিডিও দিয়ে অনেক ব্যাকলিং তৈরি করা। আর সাধারণত এই ব্যাকলিংক তৈরি হয় যখন ভিউয়াররা আপনার ভিডিওটি পছন্দ করে বিভিন্ন প্লাটফর্মে শেয়ার করে থাকে। আর তাই ভিডিও অনেক বেশি আকর্ষণীয় হতে হবে, কেননা কেউ নিজের সোশ্যাল টাইমলাইনে কখনই এমন কোন ভিডিও শেয়ার করতে চায় না যেটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় না।
আসুন জেনে নেই কোন ধরনের ভিডিওগুলো অনেক বেশি শেয়ার হয়ে থাকেঃ
মজার কন্টেন্টঃ
হাসতে সবাই অনেক বেশি পছন্দ করে, আর সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু হাস্যরস সবারই বেশ পছন্দ। আপনার ভিডিও যদি সবাইকে হাসাতে পারে তাহলে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে অনেক বেশি শেয়ার হবে।
আকর্ষণীয় এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
ইমোশনাল কন্টেন্টঃ
মানুষ যখন কোন ভিডিও দেখে অনেক বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়ে তখন তারা সেই ভিডিওটি বিভিন্ন প্লাটফর্মে শেয়ার করে থাকে। কেননা সেই ব্যাক্তি তখন আপনার ভিডিওটির মাধ্যমে সবার কাছে নিজের আবেগ ছড়িয়ে দিতে চায়।
তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে আপনার ভিডিও অনেক বেশি দুঃখের হতে হবে বরং আপনার ভিডিও যেন মানুষের আবেগকে নাড়া দিতে পারে এমন ভাবেই তৈরি করতে হবে। আর তাই এমন কোন ভিডিও তৈরি করুন যে ভিডিও আপনার ব্যক্তিগত কোন ইমোশনাল অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এতে করে খুব সহজেই মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব!
শিক্ষণীয় কন্টেন্টঃ
আবেগ এবং হাস্যরসই কেবল একমাত্র ভিডিও নয় যেগুলো অনেক বেশি ভিউ এবং শেয়ার হয়ে থাকে। এই ধরনের কন্টেন্টের পাশাপাশি শিক্ষণীয় ভিডিওগুলোও সবাই বেশ আগ্রহের সাথে শেয়ার করে থাকে। এছাড়া নিজের বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত মতামতের সাথে মিল থাকে এমন ভিডিওগুলোও প্রচুর পরিমানে শেয়ার হতে দেখা যায়।
৫। নিজস্ব ওয়েবসাইটেই ভিডিও আপলোড করুন
বর্তমানে ইউটিউবের সহজলভ্যতা এবং ভিডিও লোডিং রিলেটেড ঝামেলা এড়াতে বেশিরভাগ মানুষই ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে নিজেদের ওয়েবসাইটে এমবেডেড করে রাখেন। এক্ষেত্রে ইউটিউবে ভিউ ঠিকই হবে এবং আপনার ভিডিও হয়ত ইউটিউবে র্যাংক করবে। তবে গুগল সার্চ রেজাল্টে নিজের ওয়েভবসাইট এবং ভিডিওটি র্যাংক হবে না।
এক্ষেত্রে আপনি যদি সরাসরি নিজের ওয়েবসাইটে ভিডিওটি আপলোড করে থাকেন তাহলে সেই ভিডিও নিজে র্যাংক হওয়ার পাশাপাশি আপনার ওয়েবসাইট র্যাংকিং বৃদ্ধি করারও যথেষ্ট পরিমানে সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
তবে নিজের ওয়েবসাইটে ভিডিও আপলোড করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন একেকটি পোস্টের মধ্যে একেক অধিক ভিডিও আপলোড করবেন না। কেননা আগেও বলছিলাম যে, গুগল প্রতি পেজের মধ্যে শুধুমাত্র একটি ভিডিও লিস্ট করে থাকে। আর তাই প্রতি পোস্টের মধ্যে একটি করে ভিডিও থাকলে সেই ভিডিও খুব দ্রুত র্যাংক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে আপনি যদি ভিডিও আপলোড করার জন্য কোন থার্ড পার্টি হোস্টিং ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই সেই ভিডিওর এডিসক্রিপশনে আপনার ওয়েবসাইটের লিংক যোগ করে দিবেন। যদিও নিজের ওয়েবসাইটে ভিডিও আপলোড দেয়ার মত র্যাংকিং ক্ষেত্রে এটি সহযোগিতা করবে না, তবুও আপনার ওয়েবসাইটের রেফারেন্স হিসেবে এবং ব্যাকলিং হিসেবে ভিডিওটি কাজ করবে।
৬। ওয়েবসাইটের সাইটম্যাপ তৈরি করুন
গুগল সাধারণত আপনি কি লিখছেন বা আপনার ওয়েবসাইটে কি আছে সেগুলো বুঝার জন্য HTML ব্যবহার করে থাকে। আর যখন আপনি নিজের ওয়েবসাইটে একতি ভিডিও আপলোড করবেন তখন সাইটম্যাপের মাধ্যমে গুগলকে জানিয়ে দিন আপনার ওয়েবসাইটে কি ধরনের ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। সাইটম্যাপ হল গুগলের সাথে আপনার ওয়েবসাইট সহ ভিডিওকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম।
অনেকেই এখনো বিশেস করে ভিডিও বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সাইটম্যাপকে অতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন না। তবে ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের জন্য ঠিক যতটা সাইটম্যাপ গুরুত্বপূর্ণ, ততটা ভিডিওর জন্যো জরুরি।
৭। রিসার্চ করে কিওয়ার্ড সিলেক্ট করুন
বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের জন্য কিওয়ার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়। তবে মনে রাখতে হবে, এসইও এর জন্য শুধুমাত্র কিওয়ার্ডই যথেষ্ট নয়। তবে আপনি যখনই ভিডিও তৈরি করবেন তখন সেই ভিডিও এর প্রাসঙ্গিক কোন কিওয়ার্ডটি বেশি র্যাংক করতে পারে সেদিলে লক্ষ্য রাখুন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন ঠিক কন্টেন্টের জন্য কিওয়ার্ড রিসার্চের মতই ভিডিওর ক্ষেত্রেও লং টেইল কিওয়ার্ড অনেক বেশি কার্যকরী উপায়।
আর ঠিক কন্টেন্টের মতই আপনার LSI কিওয়ার্ডগুলো যদি ভিডিও এর ডিস্ক্রিপশনে রাখা যায় তাহলে র্যাংকিং এর জন্য সেটা খুবই চমৎকার ভাবে কাজে দেয়। এছাড়া ক্যাপশনের মধ্যেও LSI এবং রিলেয়েড কিওয়ার্ডগুলো রাখার চেষ্টা করুন এতে খুব সহজেই আপনার ভিডিও র্যাংক করবে এবং তা র্যাংক করলে আপনার ওয়েবসাইটের জন্যও সেটা বেশ উপকারী প্রভাব রাখবে।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ
কিওয়ার্ড রিসার্চ কি? কিওয়ার্ড রিসার্চ সহজ উপায়ে কিভাবে করতে হয় ?
তাহলে বুঝতেই পারছেন, বর্তমানে বিজ্ঞাপনের জন্য গুগল সার্চের মধ্যে র্যাংক পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে ভিডিও তৈরির সময় শুধু র্যাংক করার বিষয়টি মাথায় না রেখে চমৎকার মান সম্মত ভিডিও তৈরি করুন। আর সেই চমৎকার ভিডিওটি আপলোড দেয়ার সময় কিওয়ার্ডগুলো যথাযথ ব্যবহার করুন।
ক্যাপশন রাখুন আর নিজের ওয়েবসাইটে হোস্ট করুন, দেখবেন আপনার ভিডিওটি খুব সহজেই র্যাংক করছে এবং পাশাপাশি আপনার ওয়েবসাইটটিও র্যাংক করছে।
এভাবেই আপনার ভিডিওটির মাধ্যমে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো ও বিজ্ঞাপনের কার্যকরীতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। মান সম্মত ভিডিও তৈরি করুন এবং উল্যেখ্য এসইও ট্রিকসগুলো কাজে লাগান, আপনাকে ভিউয়ার খুঁজতে হবে না বরং দেখবেন ভিউয়ারই আপনাকে খুঁজে বের করছে !
লেখক পরিচিতিঃ
Digital Marketing Expert | SEO Expert | Digital Marketing Trainer |
PPC Expert | Social Media Specialist | Consultant