আপনার একটি ওয়েবসাইট আছে, এখন সেটাতে আপনার প্রয়োজন ভিজিটর। আপনি যে বিষয়ের উপর ব্লগ অথবা ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছেন সে বিষয়ে যখন কেউ গুগুলে সার্চ দেয় তখন আপনার ওয়েবসাইটটিকে সেই সার্চ রেজাল্টে আনতে হলে এসইও (SEO) অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের বিকল্প নেই। আর এই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) অনেক ভাবেই করা যায় এবং প্রায় সবগুলোই আপনার ওয়েবসাইটের জন্য জরুরী।
আদতে অন-পেজ (on-page seo) এবং অফ-পেজ (off-page seo) এই দুই ধরনের এসইও বর্তমানে বহুল প্রচলিত এবং বেশ কার্যকরী। আর এই অফ-পেজ এবং অন-পেজ নামক সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) থেকে আজকের পর্বে আমরা অন-পেজ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এর ৯ টি ধাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অন-পেজ এসইও এর মাধ্যমে আপনার টার্গেটেড ভিজিটররা খুব সহজেই সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার সাইট খুঁজে পেতে সক্ষম হবে।
এসইও (SEO) করার ধাপ সমূহঃ
খেয়াল রাখবেন আপনার ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটা পেজ যেন এসইও অপটিমাইজড হয়। আর সেই অপটিমাইজেশনের উপায়গুলো আমরা নয়টি ধাপের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব। আর এই ধাপগুলোর সবগুলোই আপনার ওয়েবসাইট র্যাংক করানোর জন্য খুবই জরুরী।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ
এসইও (SEO) কি ? কেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করবেন ?
তাই কোন ধাপ স্কিপ/মিস করে যাবেন না । আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বলে রাখি, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য পেতে হলে আপনার ওয়েবসাইটে প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত একটি এসইও অপটিমাইজড কন্টেন্ট দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
আসুন এবার সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) নিয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাকঃ-
প্রথম ধাপঃ কিওয়ার্ড বাছাই
যে পেজের এসইও করবেন সে পেজের সমস্ত কন্টেন্টগুলো ভালো করে একবার পড়ে নিন। এবার ওখান থেকেই ২টি কিওয়ার্ড নির্বাচন করুন। এই ২টি কিওয়ার্ড থেকে পেজের কন্টেন্টের সাথে বেশি মানানসই কিওয়ার্ডটিকে প্রাইমারি কিওয়ার্ড হিসেবে সিলেক্ট করুন। অন্য কিওয়ার্ডটি মেইন কিওয়ার্ডের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখেই নির্বাচন করুন (উদাহরণস্বরূপঃ মেইন কিওয়ার্ডের বহুবচন, সমার্থক ইত্যাদি)।
আপনি যদি কোন পেজের জন্য মেইন কিওয়ার্ড খুঁজে না পান তাহলে আপনাকে নতুন পেজ খুলতে হবে এবং আলাদা বা ভিন্ন কনটেন্টগুলো ঐ পেজে সরিয়ে ফেলতে হবে। কেননা, আপনি যদি নিজেই না জানেন আপনার পেজটি ঠিক কোন বিষয়ের উপর তাহলে ভিজিটর বা সার্চ ইঞ্জিন কি করে জানবে ?
দ্বিতীয় ধাপঃ পেইজ টাইটেল
সহজ করে বললে, গুগলে কোনকিছু লিখে সার্চ করলে সার্চ পেজে যে লেখাগুলো নীল রঙের, বোল্ড এবং আন্ডারলাইনড টেক্সট আকারে আসে ঐগুলোই পেজ টাইটেল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন পেজ টাইটেলের গুরুত্ব। যাইহোক, পেজ টাইটেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন –
>> পেজ টাইটেলটি অবশ্যই ৭০ শব্দের মধ্যেই হতে হবে এবং প্রতিটি পেজ টাইটেলে দুইয়ের অধিক লং টেইল কিওয়ার্ড রাখা যাবে না
>> প্রাইমারি কিওয়ার্ডটি টাইটেলের শুরুতেই লিখতে হবে
>> কিওয়ার্ড ফ্রেজ (Keyword Phrase) পাইপ চিহ্ন ( | ) দিয়ে আলাদা করে দিতে হবে
>> প্রত্যেকটা পেজ টাইটেল ইউনিক হতে হবে
>> হোম পেজ এবং কন্টাক্ট পেজ ছাড়া বাকি পেজগুলোতে আপনার বিজনেস নেম বা ডোমেন নেম উল্লেখ করার দরকার নেই
তৃতীয় ধাপঃ মেটা ডেসক্রিপশন
সার্চ ইঞ্জিনে কোনকিছু লিখে সার্চ করলে টাইটেলের নিচে যে লেখাগুলো থাকে ওগুলোই হলো মেটা ডেসক্রিপশন। মূলত মেটা ডেসক্রিপশন পড়েই ভিজিটররা সিদ্ধান্ত নেয় আপনার সাইটে প্রবেশ করবে কি না। মেটা ডেসক্রিপশন দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া আবশ্যক। মেটা ডেসক্রিপশন লেখার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় রাখবেন –
>> মেটা ডেসক্রিপশন অবশ্যই ১০০ শব্দের বেশি কিন্তু ১৫০ কম হতে হবে। এই রেঞ্জের মধ্যেই আপনাকে আপনার সেরাটা দিয়ে মেটা ডেসক্রিপশন লিখতে হবে
>> মেটা ডেসক্রিপশনে অবশ্যই প্রাইমারি কিওয়ার্ডটি রাখতে হবে এবং কমপক্ষে একটি সেকেন্ডারি কিওয়ার্ড রাখতে হবে
>> আপনার পেজ ভিজিট করার জন্য আকর্ষণীয় এবং মূল্যবান একটি কারণ অবশ্যই উপস্থাপন করুন
>> কিওয়ার্ডটি এমনভাবে ব্যবহার করুন যাতে সম্পূর্ণ মেটা ডেসক্রিপশনের সাথে সামঞ্জস্যতা থাকে। একের পর এক কিওয়ার্ড বসিয়ে মেটা ডেসক্রিপশন লিখবেন না
চতুর্থ ধাপঃ ইউ আর এল (URL)
ওয়েবসাইটের ইউ আর এল (URL) এ অবশ্যই প্রাইমারি কিওয়ার্ডটিকে রাখতে হবে। ইউ আর এলের প্রত্যেকটি শব্দ ড্যাশ (-) দিলে আলাদা করে দিতে হবে। যেমনঃ www.examplesite.com/inbound-marketing-software
পঞ্চম ধাপঃ হেডিং ট্যাগ
পেজের মধ্যে কমপক্ষে একটি এইচ-১ হেডিং ট্যাগ বা H1 ট্যাগ থাকতে হবে। H1 ট্যাগের মধ্যে প্রাইমারি কিওয়ার্ড রাখাটা এক প্রকার বাধ্যতামূলক বলা চলে। H1 ট্যাগটি পেজের একদম প্রথমে থাকে, তাই এই ট্যাগ দেখেই ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটের এই পেজে কি আছে সে সম্পর্কে প্রথম ধারণাটা পায়।
ষষ্ঠ ধাপঃ পেজ কনটেন্ট
পেজের কনটেন্টে কয়েক জায়গায় প্রাইমারি কিওয়ার্ডটিকে প্লেসমেন্ট করুন। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একরকম বসিয়ে দিলেই হবে না। ন্যাচারাল যাতে মনে হয় অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন যাতে বুঝতে পারে প্রাইমারি কিওয়ার্ডটি কন্টেন্টের চাহিদার্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাইমারি কিওয়ার্ডটিকে কমপক্ষে একবার হলেও বোল্ড বা আন্ডারলাইন করার চেষ্টা করবেন। একই উপায়ে সেকেন্ডারি কিওয়ার্ডগুলোকেও কন্টেন্টে ব্যবহার করুন।
সপ্তম ধাপঃ “Call to Action” যুক্ত করুন
কল টু একশন মূলত ভিজিটর যখন আপনার ওয়েবসাইটে আসে তখন তাকে আকর্ষণীয় কোন কিছু নিয়ে ধারনা দেয়াকে বুঝায়। আর সেই কল টু অ্যাকশন কিন্তু অবশ্যই খুবই আকর্ষণীয় হতে হবে, যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় অনেক ওয়েবসাইট ফ্রি নিউজ লেটার পাঠানোর জন্য ভিজিটরের ইমেইল এড্রেস সংগ্রহ করে থাকে। বেশীরভাগ ওয়েবসাইটের মত আপনার ব্লগের মধ্যেও এই কল টু অ্যাকশন যোগ করা প্রয়োজনীয়। এছাড়াও এই আকর্ষণীয় বিষয়টি যে কোন লেখা অথবা ছবির মাধ্যমেই মূলত সবাই দিয়ে থাকে। এদিকে এই কল-টু-অ্যাকশনের মধ্যে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের আরেকটি আকর্ষণীয় পেজের লিংক দিয়ে দিতে পারেন।
তাই ভিজিটর যখন আপনার ওয়েবসাইটে এসে এক পেজে থেকে আরেক পেজে চলে যান তখন গুগুল বুঝতে পারে যে আপনার ওয়েবসাইটে আসলেই প্রয়োজনীয় কিছু আছে যেটা ভিজিটরের জন্য খুবই উপকারী আর তাই ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পেজে যাচ্ছেন। এই বিষয়টি এসইও অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এর জন্য জরুরী, কেননা গুগুল যখন জানবে আপনার ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় কিছু আছে তখন সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ওয়েবসাইটটি বেশ কিছুটা উপরের দিকে উঠে আসবে।
আর আপনি যদি এই কল টু অ্যাকশন কোন ছবির মাধ্যমে দিয়ে থাকেন তাহলে সেই ছবিটির মধ্যে অবশ্যই ফাইল নেম এবং alt text যোগ করে দিবেন যাতে করে গুগুল সার্চে আপনার ব্যবহার করা ছবিটিও চলে আসতে পারে।
অষ্টম ধাপঃ ইন্টারনাল লিংকস
ধরুন এক পেজের প্রাইমারি কিওয়ার্ডটি কোন কারনে আপনি অন্য পেজেও মেনশন করলেন, তখন উক্ত প্রাইমারি কিওয়ার্ডের সাথে ঐ পেজের লিংকটিও যুক্ত করে দিন। একে ইন্টারনাল লিংক বলে। এভাবে প্রতি পেজে কমপক্ষে একটি বা দুইটি ইন্টারনাল লিংক রাখার চেষ্টা করবেন।
নবম ধাপঃ ছবি
প্রতিটা পেজে ব্যবহার করা ছবিগুলোকেও এসইও অপটিমাইজড হতে হবে যাতে সার্চ ইঞ্জিন ছবিগুলোকে পড়তে পারে। পেজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবিটিকে অপটিমাইজড করতে প্রাইমারি কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং অন্যান্য ছবিগুলোর ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সাধারণত নিম্নলিখিত উপায়ে ছবি অপটিমাইজড করা যায়-
>> ফাইল নেমঃ ছবির নামের প্রত্যেকটা শব্দ ড্যাশ দিয়ে আলাদা করে দিতে হবে। যেমনঃ inbound-marketing-software.jpg
>> ALT text: ALT text এ ড্যাশ বাদ দিয়ে নরমালি ফাইল নেমটা লিখতে হবে। যেমনঃ inbound marketing software.jpg
যদি কোন কারণে ছবির নাম এবং ALT text পরিবর্তন করা আপনার জন্য কঠিন হয়ে পরে বা সময়সাপেক্ষ মনে হয় তাহলে ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবিটিতে প্রাইমারি কিওয়ার্ড ব্যবহার করে ফাইল নেম এবং ALT text অবশ্যই দিতে হবে।
মেটা কিওয়ার্ডস
মেটা কিওয়ার্ড গুগল (Google) বা বিং (Bing) সার্চ ইঞ্জিন এলগোরিদমের অংশ না। তাই আমি মেটা কিওয়ার্ডকে উপরে উল্লেখিত ৯ টি ধাপের থেকে আলাদা করে এই বিষয়ে একদম শেষে লিখছি। যদিও মেটা কিওয়ার্ড গুগল (Google) বা বিং (Bing) সার্চ ইঞ্জিন এলগোরিদমের অংশ না তবুও প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি কিওয়ার্ড দিয়ে মেটা কিয়ার্ডস লিখে দিবেন। কারণ ছোটখাটো সার্চ ইঞ্জিনগুলো এখনও সার্চ রেজাল্ট দেখাতে মেটা কিওয়ার্ড ব্যবহার করে।
আপনার ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটা পেজ এসইও অপ্টিমাইজড করতে হলে এই ৯ টি ধাপ প্রত্যেকটা পেজের জন্য আলাদা আলাদাভাবে অনুসরণ করতে হবে। আর মনে রাখবেন এসইও কখনই একদিনের বিষয় নয়, আর তাই আপনার ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটি পেজ এবং কনটেন্ট এভাবে অপটিমাইজ করে দিতে হবে এবং নিয়মিত এই এসইও এর ধাপগুলো অনুসরণ করে যেতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে আপনার ওয়েবসাইটটি সার্চ রেজাল্টের মধ্যে উপরের দিকে উঠে আসতে শুরু করবে।
লেখক পরিচিতিঃ
Digital Marketing Expert | SEO Expert | Digital Marketing Trainer |
PPC Expert | Social Media Specialist | Consultant