গত কয়েক বছর ধরেই ফেসবুকের ব্যবহার আর ব্যবহারকারী দুটোই কমতির দিকে। এককালের এই জমজমাট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আগের সেই জৌলুস না থাকলেও, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য এখনো এটা অন্যতম কার্যকরী মাধ্যম। একই সাথে এই মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা আরম্ভ করার আগে ফেসবুক মার্কেটিং পরিসংখ্যান জানা প্রয়োজন ।
এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
একটা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতাদের অন্তত ৯৩% ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। সংখ্যাটা ফেসবুকের কার্যকারিতা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট।
ফ্রীলান্সিং করে আয় করতে : ক্লিক করুন
এই তথ্যটা যদি এখনি আপনাকে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে উৎসাহিত করে ফেলে তাহলে বলবো আর একটু অপেক্ষা করুন। কারণ আপানার সুবিধার্থে বাস্তবিক এবং কার্যকরী নয়টি পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছি যা আপনার পরবর্তী ফেসবুক মার্কেটিং কৌশল ঠিক করতে সাহায্য করবে।
কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনলাইনে আয় করবেন ?
ফেসবুক মার্কেটিং পরিসংখ্যান মতে –
(এক)
বিশেষ কোন উপহার বা অফার পেতে আমরা সবাই পছন্দ করি। ঠিক একই কথা বলেছেন অন্তত ৩৯% ফেসবুক ব্যাবহারকারী। তারা বিশেষ অফারের জন্যই ফেসবুকের ব্যবসায়িক পাতাগুলোতে ভিজিট করেন। আপনার ফেসবুক পেজে যদি এমন বিশেষ অফার বা উপহারের সুযোগ থাকে, তাহলে নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনার পেইজে “লাইক”-এর অভাব হবে না।
বড় বা ছোট সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানই কিন্তু এই কৌশল টা ব্যবহার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের শহর উইলিয়ামসবারগেই এর উদাহরণ রয়েছে। “ব্রিকহাউস তেভারন” নামের একটি রেস্টুরেন্ট তাদের ফেসবুক পেইজে ফ্রি পিজার বিজ্ঞাপন দিয়ে শুধু অসংখ্য লাইক আর কমেন্ট-ই পায়নি, সেই সাথে তাদের পেইজটা ব্যাপক ভাবে শেয়ারও হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সমূহ এবং সেগুলোর কন্টেন্ট ২০২০ সালে কেমন হবে ?
(দুই)
আপনার ফেসবুক পেইজে প্রতিদিন লোকে ভিজিট করবেই। কিন্তু এর মধ্যে কতজন আপনার পেইজের বিসয়বস্তুতে আকৃষ্ট হয়ে ভিজিট করছে আর কতজন আপনার দেয়া বিজ্ঞাপন দেখে ভিজিট করছে সেটাই আসল বিষয় । আপনার পেইজের বিষয়গুলো পছন্দ করে আসা ভিজিটগুলোকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভাষায় বলা হয় “অরগানিক রিচ”।
আগে ধারনা করা হত যে কোন পেইজের মোট ভিজিটের মাত্র ২% হচ্ছে অরগানিক রিচ। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে সংখ্যাটা আসলে ৬.৪%। খালি চোখে সংখ্যাটা খুব একটা বড় মনে না হলেও, এরাই কিন্তু আপনার পেইজটাকে আরো মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে। এসব ক্ষুদ্র বিষয় বুঝতে ফেসবুক মার্কেটিং পরিসংখ্যান গুলো বুঝার কোন বিকল্প নেই ।
এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
আর সেইজন্যই আপনাকে এমন সব বিষয় পেইজে রাখতে হবে যা সময়ের সাথে তাল মেলানো। যে বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ এখন ভাবে বা কথা বলে সেগুলোই হওয়া উচিৎ আপনার ফেসবুল পেইজের মুল অন্তর্ভুক্তি। কিভাবে আপনার পেইজের বিষয়গুলোকে আরো বেশি মানুষের কাছাকাছি করা যায়, এটা যত দ্রুত আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ততই লাভ।
চাকরি কিংবা ব্যবসার বাইরে অনলাইনে আয়ের উপায় সমূহ !
(তিন)
ডেস্কটপের সামনে বসে ফেসবুক দেখার দিন কমে আসছে। অন্তত ফেসবুক মার্কেটিং পরিসংখ্যান তাই বলছে। মোট ব্যবহারকারীর ৪৭% মোবাইলেই ফেসবুক দেখছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষ আপনার বিজ্ঞাপন বা পোষ্ট তাদের মুঠোফোনে দেখছে। ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক, ডেস্কটপের নানা রকম ঝক্কিঝামেলা পোহানর চেয়ে হাতের মুঠোয় সবাই ফেসবুক দেখবে। আর এটা দেখা যায় ২৪ ঘণ্টার যে কোন সময়।
ফেসবুক মার্কেটিং যারা করেন তাদের মাথার ঘাম ঝরানোর জন্য এই তথ্যটা কিন্তু যথেষ্ট। কারন এখন আপনার পেইজের বিসয়বস্তু হতে হবে মোবাইল-বান্ধব। ছবি আর ভিডিওগুলো হতে হবে যথা সম্ভব লম্বালম্বি আকারের, পোষ্টগুলো হতে হবে ছোট কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্যপূর্ণ যাতে মোবাইল স্ক্রিনে সহজেই জায়গা হয়।
আরও পড়ুন : ডেটা ড্রিভেন মার্কেটিং কি
(চার)
সময়টাই এখন ব্যস্ততার। আমাদের কারো কাছেই সময় নেই বিজ্ঞাপনের লম্বা লম্বা লাইন পরার। যে কোন পোষ্ট একটু বড় মানেই তার আকর্ষণ কমে যাওয়া। ফেসবুক মার্কেটিং পরিসংখ্যান বলছে ৪ শব্দের বিজ্ঞাপন শিরোনাম আর ১৫ শব্দের বিবরণ মানুষ সবচেয়ে আগ্রহ নিয়ে পড়ে। তবে ফেসবুক মার্কেটিংয়ের নতুনত্ব ধারা রপ্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ ।
এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
ফ্রিতে ৬ মাসে কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করবেন
এই তথ্যটার মানে কিন্তু এই নয় যে এখন বড় পোস্টের আকর্ষণ কমে গেছে। সেইসব পোস্টের আলাদা সময় ও জায়গা দুটোই আছে। কিন্তু বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সংক্ষেপই সফলতা।
বিজ্ঞাপন সংক্ষেপ হলে পাঠকের মনে এই ভয়টা আর থাকে না যে সে কিছু মিস করে গেছে। আর তখন সে চেষ্টা করে আপনার কথাগুলোই নিজ দায়িত্তে তার অন্য বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দেয়ার। আর এতে করে আপনি পাচ্ছেন অনেক বেশি ক্লিক আর বেড়ে যাচ্ছে আপনার পেইজের ক্লিক-থ্রু রেট বা “সি টি আর”।
(পাঁচ)
সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞাপন বা পোষ্ট নিয়ে এরপরও কি আপনার মনে কোন দ্বিধা থেকে যাচ্ছে? তাহলে জেনে রাখুন ছোট বিজ্ঞাপন অথবা পোষ্ট অন্তত ২৩% বেশি দেখা, লাইক, বা শেয়ার হয়।
Social Media Management – The Complete 2019 Manager Bootcamp
ছোট কিন্তু গোছানো বক্তব্য সবসময়ই আকর্ষণীয়। ব্যস্ত সময়ের মধ্যে এমন একটা কিছু পরতে যেমন সবার ভাল লাগে তেমনি অন্যের সাথে শেয়ার করলেও মনটা ভাল হয়ে যায়।
(ছয়)
রাস্তায় যাচ্ছেন আর ফেসবুক স্ক্রল করছেন। আচমকা পেইজে থাকা একটা ভিডিও উচ্চশব্দে বেজে উঠলো। ফলাফল আশেপাশের মানুষের বিরক্ত চাউনি আর ওই পেইজে আপনার আর না যাওয়া। আপনার মতোই মনোভাব ফেসবুকের অন্তত ৮০% ব্যবহারকারীর। নিজে থেকে চলতে শুরু করা ভিডিও তাদের মোটেও পছন্দ নয়।
তাই আপনার পেইজে কোন ভিডিও আপলোড করার আগে ভিডিওতে সাব-টাইটেল রাখতে ভুলবেন না। কারন বেশিরভাগ মানুষই এটা দেখবে, জরুরী নয় তারা শুনবেও। এটা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে যেন তারা শব্দ না শুনেও ভিডিওটা দেখে উপভোগ করতে পারে।
(সাত)
ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনার ভিডিওটা সবাই চলতি পথে বা বাইরে দেখবে। এমনও হতে পারে কেউ কেউ আরাম করে বাড়িতে বা প্রিয় কোন জায়গায় বসে ভিডিওটা দেখছে। তখন কিন্তু সাব-টাইটেল অত জরুরী নয়।
তাই আপনার উচিৎ হবে এমন ব্যবস্থা রাখা যাতে চাইলেই সাব-টাইটেল বন্ধ বা চালু করা যায়। এতে করে আপনার ভিডিওটা দেখার সময় ১২% পর্যন্ত বাড়তে পারে। অন্তত গবেষণা তো তাই বলছে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং টুলস কিভাবে আপনি বেছে নিবেন ??
(আট)
যে কোন কিছুর উপস্থাপনে “হুক” বলে একটা কথা খুব প্রচলিত। মানে হচ্ছে কত দ্রুত আপনি পাঠক বা দর্শককের মনোযোগটা দখলে নিয়ে ফেলতে পারেন। ভিডিওর ক্ষেত্রে এই সময়টা হোল ৩ সেকেন্ড।
সময়টা শুনতে সামান্য মনে হলেও, ওই টুকু সময়ের মধ্যেই আপনি দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন। এই ৩-সেকেন্ডে ভিডিওতে একদিকে যেমন তথ্য থাকবে অন্যদিকে একটু ঘাটতিও রাখতে হবে। যাতে করে দর্শক সেটা পূরণের জন্য পুরো ভিডিওটা দেখতে আগ্রহী হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই ৩ সেকেন্ডের জন্য আপনাকে কত ঘণ্টা ব্যয় করতে হবে।
(নয়)
পড়ার চেয়ে দেখা যে বেশি আকর্ষণীয় সেটা টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা থেকেই বোঝা যায়। একই কথা ফেসবুকের বেলায়ও সত্যি। যে কোন পোস্টের চেয়ে ভিডিও বেশি শেয়ার হয়। তার মানে আপনার পণ্যের মার্কেটিংয়ের কোন বিজ্ঞাপন যদি ভিডিওতে হয় তাহলে অনেক বেশি মানুষের কাছে তা সহজেই পৌঁছে যাবে।
আরও পড়ুন : কিভাবে ফেসবুক মেসেঞ্জার রুম ব্যবহার করবেন
এক একটা ভিডিও গড়ে ৮৯.৫ বার শেয়ার হয়। তাই মার্কেটিং কৌশলে ভিডিওকে যুক্ত করাটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ফেসবুক মার্কেটিং পরিসংখ্যান বলে একই পণ্যের ছবি সহ বিজ্ঞাপন শেয়ার হয়েছে মাত্র একবার আর তার ভিডিওটা শেয়ার হয় ১৫ বার। আগে জানতাম একটা ছবি নাকি হাজারটা কথা বলে দেয়। ফেসবুকের কল্যাণে এখন বলা যায় একটা ভিডিও অন্তত লক্ষ কথা বলে !
পরিশেষে বলতে চাই
আপনার ব্যবসার ও তার ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য ফেসবুক একটা বিরাট সুযোগ আবার একই সাথে অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জও বটে। আর এই চ্যালেঞ্জকে ডিঙ্গিয়ে, সঠিক কৌশল অবলম্বন করে আপনার পণ্য বেশি সংখক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে উপরের ফেসবুক মার্কেটিং পরিসংখ্যান আপনাকে সাহায্য করবে বলে আশা রাখি।
যদি এ সম্পর্কে আপনার আরও জানার কিছু থাকে তাহলে আমাদের মেইল করতে পারেনঃ [email protected]
লেখক পরিচিতি :
Digital Marketing Expert । SEO Expert | Digital Marketing Trainer |
PPC Expert | Social Media Specialist | Consultant