এই চাপ্টারে আপনারা জানবেন একটি ফেসবুক ক্যাম্পেইনের স্ট্রাকচার কেমন হয় আর কী ভাবে ফেসবুক বিজ্ঞাপনের বাজেট নির্ধারণ করতে হয়! তবে এই বিষয়ে সব চাইতে মজার বিষয় হল ফেসবুক ক্যাম্পেইনের প্রসেস নিয়ে আপনাকে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হতে হবে না।

কেননা এটি একদম সহজ এবং স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড। আমাদের এই সিরিজের ইতোমধ্যে লেখা পর্ব গুলোতে আমরা যে বিষয় গুলো কাভার করে এসেছি সে গুলো একনজরে দেখে নিন এবং আপনার যদি কোন কিছু মিস হয়ে যায় তাহলে সেটা পড়ে আসতে পারেনঃ

কোর্সটি করার জন্য ক্লিক করুন

১ম পর্বঃ যে পাঁচটি কারনে আপনি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিবেন

২য় পর্বঃ খুব সহজেই ফেসবুক বিজ্ঞাপন একাউন্ট সেট-আপ করে নিন

৩য় পর্বঃ প্রথম বারের মত ফেসবুক বিজ্ঞাপন সেট করুন (ফেসবুক এডম্যানেজার গাইড)

৪র্থ পর্বঃ ফেসবুকে আপনি যে কয়ধরণের বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন

৫ম পর্বঃ যে ধরণের ছবি ও লেখা দিলে ফেসবুক বিজ্ঞাপন বেশি কার্যকর হবে

৬ষ্ঠ পর্বঃ অডিয়েন্স বুঝে কী ভাবে তাদের উদ্যেশ্যে বিজ্ঞাপন সেট করবেন

ফেসবুক ক্যাম্পেইন স্ট্রাকচার যেমন হয়ে থাকে

ফেসবুক ক্যাম্পেইন স্ট্রাকচারের তিনটি ধাপ রয়েছে, সেই ধাপ গুলো হলঃ

** ক্যাম্পেইন

** এডসেট

** এড

আপনার ফেসবুক ক্যাম্পেইনে বেশ কিছু এডসেট থাকলেও এর ক্যাম্পেইন অবজেকটিভ শুধুমাত্র একটিই থাকবে। অর্থাৎ আপনি চাইলে একই ক্যাম্পেইনে পেজ লাইক এবং ভিডিও ভিউ এর জন্য বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন না।

জেনে নিন ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপ গুলো

আপনাকে শুধু যেকোন একটি অবজেকটিভ নিয়েই বিজ্ঞাপন দেয়া লাগবে। তবে আপনি কি অনেক মার্কেটিং করেও কোন ফলাফল পাচ্ছেন না? তাহলে দেখে নিন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করেও সফলতা না আসার কারন।

যেকোন একটি এডসেটের মধ্যে অনেক গুলো বিজ্ঞাপন থাকলেও প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপনের অডিয়েন্স টার্গেট, বাজেট, শিডিউল, বিডিং, এডপ্লেসমেট কেবল মাত্র একটিই হবে।

এছাড়া আপনি যদি বিভিন্ন ধরণের এড দিয়ে টেস্ট করতে চান তাহলে এই ধরণের এডসেট আপনার জন্য অনেক উপকারী ভূমিকা রাখবে।

আপনার পুরো ক্যাম্পেইনের একটি ক্ষুদ্র অংশ হল একটি বিজ্ঞাপন। আমরা বেশীর ভাগ সবাই সাধারণত একটি ফেসবুক বুস্ট দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যাই।

ফেসবুক বিজ্ঞাপনের সকল ধরণের সুবিধা গ্রহণ করিনা এবং একই সাথে একেকটি বিজ্ঞাপন থেকে তথ্য উপাত্তবের করে ডাটা ড্রিভেন মার্কেটিং করার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হইনা। আসুন তাহলে এক নজরে দেখে নেই একটি ফেসবুক ক্যাম্পেইনের টোটাল স্ট্রাকচারঃ

একটি ক্যাম্পেইন সেটআপ প্রসেসের মধ্যে আপনার আলাদা আলাদা বিজ্ঞাপন গুলোর ভিন্ন টার্গেট আপনাকে তেমন একটা ভোগান্তি দিবেনা। পুরো বিষয়টি আপনার একনজরে চলে আসবে এবং এটি খুবই সহজ।

এই ধরণের বিজ্ঞাপন যদি আপনি প্র্যাকটিস করে নিতে পারেন তাহলেই আপনি একজন সফল সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হয়ে উঠতে পারবেন এবং এই জ্ঞান দিয়েও আউটসোর্সিং মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

এই আর্টিকেলে আমরা প্রত্যেকটি এডসেটের অংশ গুলো আলাদা ভাবে দেখবঃ

ফেসবুক এডক্যাম্পেইন এর বাজেট যেভাবে সেট করবেন

আপনি বিজ্ঞাপন দিয়ে কতটা সফল হবেন এবং আপনার বিজ্ঞাপনের খরচ উঠে আসবে কিনা সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে কতটা বুদ্ধিমত্তার সাথে আপনি বাজেট সেট করছেন তার উপর।

এই অংশের প্রথম ধাপ “বাজেট এবং শিডিউল” সেটআপ করা বিষয়ক আলোচনা।এছাড়া আপনার ফেসবুক ফ্যান পেজ যত বেশি সুন্দর হবে তত বেশি বিজ্ঞাপন কার্যকর হবে। আপনি যদি ফেসবুক আরো আকর্ষণীয় করতে না পারেন, তাহলে দেখে নিন কী ভাবে আকর্ষণীয় উপায়ে ফেসবুক ফ্যানপেজ বানাবেন। এছাড়াও আরো দেখে নিতে পারেন যে, করোনা কালিন সময়ে ফেসবুক মার্কেটিং কতটা কার্যকরী!

কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন

ফেসবুক সাধারণত আপনাকে বাজেট বিষয়ক দুটো অপশন সিলেক্ট করতে দেয়ঃ

১। ডেইলি বাজেটঃ আপনি যে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবেন সেই বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে আপনি প্রতিদিন সর্বচ্চ কত টাকা খরচ করতে চান সেটা এই অংশে নির্ধারন করে দিবেন। আপনি যে বাজেট নির্ধারন করবেন ফেসবুক আপনার কাছে সেই বাজেট থেকে বেশি পরিমাণ টাকা চার্জ করবেনা।

তবে আপনি যদি বেশ কয়েক দিনের জন্য একসাথে বিজ্ঞাপনদেন তাহলে কোন কোন দিন এমন হতে পারে যে আপনার বিজ্ঞাপন থেকে অনেক বেশি ফলাফল আসছে, তখন ফেসবুক আপনার বাজেট থেকে সেদিনের জন্য ২৫% বেশি বিজ্ঞাপন দেখাবে এবং পরবর্তীতে সেই টাকা অন্যান্য দিনের বিজ্ঞাপন বাজেট থেকে এডজাস্ট করে নিবে।

আবার ঠিক একই ভাবে কোন দিন যদি দেখা যায় যে আপনার কোন ধরণের সফলতাই আসছেনা সেদিন আপনার বাজেট থেকে ২৫% কম খরচ করে বিজ্ঞাপন দিবে। এই নিয়ে আপনাকে খুব একট উদ্বিগ্ন হতে হবে না, ফেসবুক নিজ থেকেই আপনার বিজ্ঞাপনকে অটো অপ্টিমাইজ করে দেয়।

ফেসবুক বিজ্ঞাপন দেয়ার আগে ফেসবুক বিজ্ঞাপন নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান সম্পর্কে দেখে নিয়ে নিজের সাথে তুলনা করে দিতে পারেন।

লাইফ টাইম বাজেটঃ অর্থাৎ আপনি যদি বেশ কয়েক দিনের জন্য এক সাথে বিজ্ঞাপন দিতে চান তাহলে আপনি সব মিলিয়ে কত টাকা খরচ করতে চাচ্ছেন সেটা এখানে নির্ধারন করে দিতে পারবেন। এমন কি আপনি যদি একটি লাইফ টাইম বাজেট দিয়ে দেন, অর্থাৎ আপনি চাচ্ছেন এই বিজ্ঞাপনের জন্য আপনি পাঁচ দিনে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে চান।

তখন ফেসবুক আপনার থেকে বিজ্ঞাপন শুরু করার এবং শেষ করার তারিখ নিয়ে নিজেই ক্যালকুলেশন করে প্রতিদিনের বাজেট এক হাজার টাকা করে দিয়ে দিবে। আসুন দেখে নেই কী ভাবে আপনি ফেসবুকের ফ্যান ফলোয়ার আরো চমৎকার ভাবে বৃদ্ধি করবেন।

পরবর্তীতে আপনি চাইলে যে কোন সময় এই বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিতে পারবেন। মাঝ পথে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলে শুধু মাত্র যতটুকু খরচ হয়েছে ঠিক ততটুকুই টাকা কেটে নিবে ফেসবুক।

এড ডেলিভারি যে ভাবে অপটিমাইজ করবেন

ক্যাম্পেইন বাজেট কী ভাবে নির্ধারণ করে সেটা তো দেখলাম, এখন দেখব বিজ্ঞাপনের ডেলিভারি কী ভাবে অপটিমাইজ করে দেয়া যেতে পারে।

অপটিমাইজেশন ফর এডডেলিভারির মধ্যে আপনি যে উদ্যেশ্যে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সেই উদ্যেশ্য সেট করে দিন। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বৃদ্ধি করার জন্য বিজ্ঞাপনটি দিয়ে থাকেন তাহলে লিংক ক্লিক্স সেট করে দিন।

আবার যদি প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে চান তাহলে “ডেইলি ইউনিক রিচ” অপশনটি সেট করে দিন।

ফেসবুক এডবিডিং কী ভাবে কাজ করে থাকে

আপনি যখনই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তখন আপনাকে মনে রাখতে হবে সেই একই অডিয়েন্সের জন্য আরো অনেক মানুষ বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ আরেকটু সহজ করে বলতে গেলে ঢাকা এলাকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন, তাহলে মনে রাখবেন ঢাকায় আরো অনেকেই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে।

তাই আপনার বিডিং যদি সব চাইতে ভালো হয়, তাহলে আপনার বিজ্ঞাপনও সব চাইতে ভালো গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে।

আপনি চাইলে নিজেও এই বিডিং সেট করে দিতে পারেন আবার ফেসবুক অটোমেটিক ভাবেও এই বিডিং সেট করে নিতে পারে। আপনি যদি ফেসবুকের এই বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় একদম নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে আমরা আপনাকে পরামর্শ দিব যাতে করে এই বিডিং প্রসেসটি আপনি ফেসবুকের হাতেই ছেড়ে দেন।

মনে রাখবেন ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকেই আয় করে, আর তাই ফেসবুক সব সময় চায় সব বিজ্ঞাপন দাতাই যাতে দিন শেষে ভালো একটি ফলাফল নিয়ে যেতে পারে। আর তাই ফেসবুকের এই বিডিং সিস্টেমটি খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। একদম নতুন হলে এই নিয়ে আপনাকে তেমন একটা মাথা না ঘামালেও চলবে।

আবার আপনি যখন ম্যানুয়াল ভাবে এই বিজ্ঞাপন বিডীং সেট করবেন, তখন আপনাকে সিলেক্ট করে দিতে হবে যে প্রত্যেক টিলিংক ক্লিক অথবা ইম্প্রেশনের জন্য আপনি সর্বচ্চ কত টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে সব সময় মনে রাখবেন ফেসবুক যেই বিডিং সাজেস্ট করবে তার থেকে কিছু টাহলেও কম বিড দেয়ার চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ ফেসবুক যদি সাজেস্ট করে থাকে প্রতিটি ক্লিকের জন্য ১০০ টাকা। তাহলে আপনি বিডিং সেট করবেন ৫০-৯০ টাকার মধ্যে।এভাবে আপনি কম খরচে সর্বচ্চ ফলাফলটি পেয়ে যেতে পারবেন।

এছাড়া একটি বিষয়ে জেনে রাখা ভালো যে, আপনার যদি নিজের ওয়েবসাইট থাকে এবং সেখানে আপনি ফেসবুক পিক্সেল সেট করে রাখেন, তাহলে সেই তথ্য গুলো কাজে লাগিয়ে আপনি আরো ভালো ভাবে এবং কার্যকরী উপায়ে বাজেট নির্ধারন করতে পারবেন।

ফেসবুক এডশিডিউলিং

আপনি চাইলে বিজ্ঞাপন শিডিউল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি যদি চান যে আপনার বিজ্ঞাপন প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত দেখানো হবে সেটা আপনি নিজের মত করে সেট করে নিতে পারবেন।

আদতে পূর্ববর্তী বিজ্ঞাপনের রেজাল্ট থেকে গবেষণা করেই এই ধরণের এডশিডিউলিং করা হয়ে থাকে। কেননা এর আগের অনেক গুলো বিজ্ঞাপনে যদি দেখা যায় প্রতিদিন ৩টা থেকে চার টার মধ্যেই কেবল আপনার সেল হয়, তাহলে অন্যান্য সময় বিজ্ঞাপন না দিয়ে আপনি শুধু মাত্র ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ফেসবুক এডডেলিভারি টাইপ

এই অংশে আপনি সেট করে দিতে পারবেন যে, আপনার দেয়া বিজ্ঞাপন কতটা দ্রুত ফেসবুকে দেখাবে। এখানে আপনি দুটো অপশন পাবেনঃ

১। স্ট্যান্ডার্ড এডডেলিভারি

২। একসিলারেট এডডেলিভারি

এখানে স্ট্যান্ডার্ড মানে হল ফেসবুক তার নিজস্ব সময়ে এই বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করবে। আর এক সিলারেট অপশন চুজ করার মাধ্যমে আপনি নির্ধারন করে দিবেন যে দ্রুত এই বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করে দেয়া প্রয়োজন।

প্লেসঅর্ডার এন্ড পাবলিশ

আপনি বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইনের যাবতীয় অংশ গুলো সেট করে দিয়েছেন ইতোমধ্যেই। এখন আপনার যেটা প্রয়োজন করা সেটা হল প্লেস অর্ডারে ক্লিক করে বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন পাবলিশ করে দেয়া। বিজ্ঞাপন পাবলিশ করার আগে প্রয়োজনে আরেকবার পুরো বিষয়টি রিভিউ করে নিন।

আজকে দেখলেন কত টা সহজে আপনি ফেসবুক বিজ্ঞাপনের এডবিডিং এবং অপটিমাইজ করে দিতে পারেন কম খরচে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য। আপনি মোটামুটি শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন আমাদের এই ফেসবুক বিজ্ঞাপন সিরিজের।

আর একটি অধ্যায় শেষ করলেই আপনি নিজেকে একজন ভালো মানের ফেসবুক মার্কেটার বলে পরিচয়দিতে পারবেন। আগামি পর্বে আপনি জানতে পারবেন ফেসবুক বিজ্ঞাপনের এই রিপোর্ট গুলো কীভাবে এনালাইসিং করতে পারবেন।

বিশেষ করে ফেসবুক বিজ্ঞাপনের রিপোর্ট এনালাইজিং এর মাধ্যমে আদতে আপনি পরবর্তীতে আরো কার্যকরী উপায়ে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। এখান থেকে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বিজ্ঞাপনটি কেন কাজ করলনা অথবা আরো কী ভাবে আপনার বিজ্ঞাপনটি কার্যকর হয়ে উঠত।

লেখক পরিচিতিঃ
MD.ARIFUR RAHMAN

Social media expert in Bangladesh

Digital Marketing Expert | SEO Expert | Digital Marketing Trainer |
PPC Expert | Social Media Specialist | Consultant । Affiliate Marketer

Sharing Is Caring

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to Top