যে কোন ধরণের বিজ্ঞাপন হোক সে পিপিসি ক্যাম্পেইন অথবা ফেসবুক মার্কেটিং, প্রথমেই আপনার একটি সুন্দর প্ল্যান তৈরি করতে হবে। আপনি কত টাকা খরচ করতে পারবেন, সেই টাকায় কতজন মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। কীভাবে আরো সুন্দর করে বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে অল্প টাকাতেই বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন সেটা প্ল্যান করে ফেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আবার প্ল্যান করলেই যে আপনার সব প্ল্যান সাকসেসফুল হবে ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। বিশেষ করে আপনার যদি কোন ইকমার্স ওয়েবসাইট থাকে তাহলে মনে রাখতে হবে যে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের দিকেও আপনাকে বিশেষ ভাবে মনযোগী হতে হবে।
উপরের কোর্সটি করার জন্য ক্লিক করুন
এছাড়াও আপনি ঠিক কেন বিজ্ঞাপনটি দিচ্ছেন, সেটা আগে থেকেই বিবেচনায় রাখতে হবে, আর সেই অনুযায়ী নিজের বিজ্ঞাপনগুলো অপটিমাইজ করে নিতে হবে।
আর কেনই বা পিপিসি মার্কেটিং করবেন, এতে কি লাভ হবে? এটা জানতে চাইলে পিপিসি মার্কেটিং এর প্রয়োজন এবং উপকারিতা নিয়ে আমাদের লেখা আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
সাধারণত মানুষ যে সব উদ্দেশ্য নিয়ে পিপিসি বা ক্লিক ভিত্তিক বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেঃ
** মানুষের কাছে নিজের ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানানো
** নিজের পণ্যের প্রচার এবং প্রসার
** পণ্য বিক্রয়
** সেবা বিক্রয়
** পূর্বের কাস্টোমারের কাছে নতুন অফার নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
যখনই বিজ্ঞাপন দিতে যাবেন, তখনই খেয়াল রাখতে হবে যে বিজ্ঞাপনে আপনার উদ্যশ্য সফল হচ্ছে কি না। আসুন তাহলে একটু দেখে নেই পিপিসি ক্যাম্পেইনের সাধারণ উদ্যশ্যগুলো সম্পর্কে। এছাড়াও জানব কীভাবে আরেকটু স্ট্র্যাটেজিক ভাবে আগালে আপনার বিজ্ঞাপন থেকে ভালো রেজাল্ট আসবে। এছাড়াও গুগুলে বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় লেখা বোল্ড করার মাধ্যমেও আপনি বিশেষ ভাবে নিজের বিজ্ঞাপনকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবেন।
নিজের অথবা কোম্পানির ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষকে জানানো
বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইনে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মানুষ ধীরে ধীরে টেকনোলজির দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। আর তাই মানুষকে নিজের ব্র্যান্ড সম্পর্কে অনলাইনে জানানো জরুরী। নিজের কথাই চিন্তা করুন, অনেক সময়ই আমরা এখন অনলাইন থেকেই বিভিন্ন কিছু ক্রয় করে ফেলি। বাজারে যাওয়ার পরিবর্তে অনলাইন থেকেই পন্য ক্রয় করে ফেলি।
পিপিসি বা ক্লিক ভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার বিজ্ঞাপনটি নিজের ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানান দিচ্ছে কি না। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন দেয়ার ভাষা সম্পর্কে আপনাকে একটু খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও আপনার পন্য সম্পর্কে সঠিক কাস্টোমারদের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছানোর জন্য ক্যাম্পেইন টার্গেটিং এর দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
ধরুন আপনার পন্য হল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি মিষ্টি। এখন প্রথমেই যেহেতু কারা আপনার কাস্টোমার হতে পারে এই সম্পর্কে আপনার জানা নেই, তাই প্রথমেই চেষ্টা করুন একটু বয়স্ক যেমন ৪০+ মানুষদের টার্গেট করতে। কেননা সাধারণত এই বয়সের আগে মানুষ তেমন একটা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় না। পরবর্তীতে আপনার বিজ্ঞাপনের ফলাফল অনুযায়ী আপনি একটি ডাটাবেজ তৈরি করে রাখতে পারবেন এবং একটা সময়ে সেই ডাটাবেজ অনুযায়ী শুধুমাত্র ডায়াবেটিক রোগীদের কাছেই নিজের পন্য সম্পর্কে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারবেন।
নিজের পণ্যের প্রচার এবং প্রসার
আপনার ব্র্যান্ড এবং পন্য দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। এই দুটো বিষয়ে বিজ্ঞাপনও ঠিক তেমনই আলাদা ধরনের হওয়া উচিৎ। মনে রাখবেন আপনার ব্র্যান্ড কিন্তু একটাই, আর সেই ব্র্যান্ডের আন্ডারে অনেকগুলো পন্য বা সার্ভিস হতে পারে।
এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
ধরুন আপনার যদি বই প্রকাশনীর ব্যবসা থাকে তাহলে প্রকাশনী হল আপনার ব্র্যান্ড আর বই হল আপনার পন্য। আর যখন আপনি ব্র্যান্ড সম্পর্কে সবাইকে জানাবেন তখন বিক্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় আনার প্রয়োজন নেই।
তবে যখন বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন প্রদান করবেন তখন কিন্তু আপনাকে ব্র্যান্ডে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এমন কোন ধরণের বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না যেটাতে আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু কমে যায় এবং কাস্টোমারের আপনার সম্পর্কে কোন নেগেটিভ আইডিয়া চলে আসে।
আবার কখনো এমন হতে পারে, যখন আপনি শুধুমাত্র নিজের পণ্যের প্রসার করতে হবে, তখন আপনার মূল লক্ষ্য হবে পণ্যের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করা।
নতুন কোন পন্য আসলে সেই পণ্যের সাথে মানুষকে পরিচিত করা খুবই জরুরী। একবার কেউ যখন পন্য সম্পর্কে পরিচিত হয়ে যাবে তখন আর কোন ধরণের সমস্যা হবে না। খুব সহজেই সেই পন্য বিক্রয়ে করতে পারবেন।
পন্য বিক্রয়
পন্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যখন আপনি পিপিসি বা ক্লিক ভিত্তিক এই বিজ্ঞাপনটি দিবেন তখন যে বিষয়টি আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, মানুষ যেহেতু সার্চ দিয়ে আপনার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করছে তার মানে তারা কিছুটা হলেও এই সম্পর্কে আগ্রহী।
আর তাই সাধারণত এই ধরণের বিজ্ঞাপন দেয়ার সাথে সাথে মানুষ প্রচুর প্রশ্ন করা শুরু করবে আপনাকে। আর তখন আপনি যদি ধৈর্য ধরে সুন্দর করে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন তাহলে তখন একসাথে আপনার দুইটা উপকার হবে।
প্রথমত কাস্টোমারদের আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা আসবে যে আপনার ব্র্যান্ডের কাস্টোমার কেয়ার খুবই ভালো। এতে করে তারা আপনার উপর নির্ভর করবে এবং পন্য ক্রয় করতে আগ্রহী হবে। আর দ্বিতীয়ত তারা যখন আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করার পাশাপাশি আপনার পন্য ক্রয় করেও সন্তুষ্ট হবে তখন আপনাকে বুঝতে হবে এই কাস্টোমার পরবর্তীতে আপনার কাছ থেকে আরো পন্য অথবা সেবা গ্রহণ করবে। আপনি যদি নিয়মিত এমন রিপিটেড কাস্টোমার পেতে থাকেন, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার উদ্যোগ বা ব্যবসা সফলতার দেখা পাবে।
সেবা বিক্রয়
হতে পারে আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার, আর আপনি অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করে থাকেন। এখন আপনি যদি পিপিসি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করেন তাহলে আপনার প্রচার এবং প্রসার হবে খুব দ্রুত। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে ল্যান্ডিং পেজ এর ডিজাইন।
অর্থাৎ আপনার কাস্টোমার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে এসে যেই ওয়েবসাইট বা ল্যান্ডিং পেজে আসবে, সেই ডিজাইন অবশ্যই খুবই সুন্দর এবং চমকপ্রদ হতে হবে।
কেননা কাস্টোমার যখন এসে প্রথমেই আপনার নিজের একটি ডিজাইন পছন্দ করবে তখনই সে পরবর্তীতে আপনার সেবা গ্রহণ করার ব্যাপার আগ্রহী হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে যদি আপনার ল্যান্ডিং পেজের ডিজাইন তার পছন্দ না হয় তাহলে সে আর আপনার উপর ভরসা করতে পারবে ন।
কেননা তখন কাস্টোমারের ধারণা হতে পারে যে নিজের ডিজাইনই সুন্দর করে করতে পারছে না, সে কিভাবে আমার জন্য ডিজাইন করে দিবে।
ঠিক একই ভাবে আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপার হন অথবা সফটওয়্যার ডেভেলপার হন তাহলে আপনার ইতোপূর্বের করা কাজের স্যাম্পল আপনাকে ল্যান্ডিং পেজে রাখতে হবে। এতে করে যে কোন ক্লায়েন্ট এসে প্রথমেই আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পেয়ে যাবে।
পূর্বের কাস্টোমারের কাছে নতুন অফার নিয়ে যাওয়া
আমরা ইতোমধ্যেই যে কাস্টোমার ডাটাবেজ নিয়ে কথা বলছিলাম, অর্থাৎ যখনই একজন কাস্টোমার আপনার কাছ থেকে কোন একটি পন্য ক্রয় করে সন্তুষ্ট হচ্ছে তখনই ধারণা করতে হবে পরবর্তীতে আপনি তার কাছে আরো পন্য বিক্রয় করতে পারবেন।
কাস্টোমার কেয়ার এর মাধ্যমে যখন কাস্টোমারদের সাথে সুন্দর প্রফেশনাল একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় তখন সেই কাস্টোমারই আপনার ব্যবসা সফল করার মূলমন্ত্র হয়ে উঠে।
আর তাই আপনার যখন এমন কোন একটি কাস্টোমার ডাটাবেজ থাকবে, তাদের কাছে আপনার নিত্য নতুন পন্য সম্পর্কে জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এক্ষেত্রে আপনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে সব সময় নতুন পণ্যের গুণাবলী এবং উপকারিতা নিয়ে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবেন। উল্লেখ্য যে এই ধরণের তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন দেয়াকে ডেটা ড্রিভেন মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে।
আশাকরি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনি খুব চমৎকার ভাবে নিজের বিজ্ঞাপনের প্ল্যানিং সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য ছাড়া আপনি যদি এলোমেলো বুস্ট করতে থাকেন, তাহলে সেটা কখনই আপনার জন্য ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে না।
হুট করেই বিজ্ঞাপন দিয়ে দিলে হয়ত আপনার ভাগ্য ভালো হলে সেটা থেকে ভালো ফলাফল চলে আসতেও পারে। তবে মনে রাখতে হবে এই ভালো ফলাফল খুব বেশীদিন থাকবে না।
কেননা আপনি যেহেতু কোন ধরণের মার্কেটিং প্ল্যান ছাড়াই বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তাই একটা সময় আপনার বিজ্ঞাপনের টাকাও উঠে আসবে না। আপনি ব্যবসা সফল হতে পারবেন না। ব্যবসা সফল হওয়ার অন্যতম একটি মূলমন্ত্র হল কাস্টোমারদের বুঝা এবং সেই অনুযায়ী প্ল্যানিং এর মাধ্যমে সব কাজ করা। আর এক্ষেত্রে যখন বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে যাবেন, সেটাও ব্যতিক্রম কিছু হবে না।