অনলাইনে নিজের একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করে অনেকেই অনলাইনে আয় করতে চান কিন্তু ডোমেইন এবং হোস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত না জানা থাকায় পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। ব্লগিং হোক বা এফিলিয়েট, একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রথমেই আপনার থাকতে হবে ডোমেইন এবং হোস্টিং ।
আর তাই ডোমেইন এবং হোস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত না জানা থাকলে আপনাকে প্রতি পদে পদে হতে হবে প্রতারণার শিকার। আসুন তাহলে জেনে নেই সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত ডোমেইন এবং হোস্টিং সম্পর্কে।
ডোমেইন কি এবং কীভাবে কিনব ?
“ডোমেইন” শব্দটি শুনে থাকলেও অনেকেই জানিনা ডোমেইন কি ? মূলত ডোমেইন যে কোন ওয়েবসাইটের নাম। যেমন ধরুন google.com হল গুগুলের ডোমেইন বা ওয়েবসাইটের নাম। আপনার ওয়েবসাইট যদি কোম্পানির নামে দেয়া যায় তাহলে সেটা খুবই ভালো হয়। এছাড়া আপনার যদি কোন কোম্পানি না থাকে এবং আপনি ব্লগিংয়ের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করছেন তাহলে যে বিষয়টি নিয়ে আপনি ব্লগিং করছেন সেই বিষয়টি যেন ডোমেইনের মধ্যে থাকে।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ
যেভাবে নিজেই নিজের ওয়েবসাইট ইন্সটল করবেন !
ডোমেইন হোস্টিং ব্ল্যাক ফ্রাইডে অফার
আসুন আরেকটু বিস্তারিত বুঝিয়ে বলি। ধরুন, আপনার কোম্পানির নাম প্রাণ অথবা আরএফএল এখন আপনার ডোমেইনের মধ্যে সেই নামটি থাকা জরুরি। প্রাণের কথাই চিন্তা করুন, তারা নিজেদের ওয়েবসাইটের নাম দিয়েছে pranfoods.net।
আকর্ষণীয় এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
আবার আপনি যদি ভ্রমণ নিয়ে আপনার ব্লগটি তৈরি করে থাকেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের নামের মধ্যেও সেটা থাকা বাঞ্ছনীয়। travelwitharif.com হতে পারে এই সম্পৃক্ত একটি ভালো উদাহরণ।
আপনার ওয়েবসাইটের নামের উপরেই আপনাকে মার্কেটিং করতে হবে এবং ধীরে ধীরে ওয়েবসাইটটিকে মানুষের সেই নামের অর্থাৎ ডোমেইনের মাধ্যমেই চিনতে পারবে।
ডোমেইন কিন্তু বেশ কয়েক ধরনের হতে পারে আর তারমধ্যে .com সবচাইতে বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু .com ডোমেইন এখন প্রায় শেষ হয়ে আসছে বিধায় সবাই ধীরে ধীরে অন্যান্য ডোমেইনের ধিকেও ঝুঁকছে। যেমন বলা যেতে পারে .net/.host/.xyz/.me/.org ইত্যাদি।
এছাড়া আরেক ধরনের ডোমেইন আছে যেগুলো শুধুমাত্র যে কোন দেশের সরকার ব্যবহার করতে পারবে। যেমন ধরুন .gov.bd/.gov.uk/.gov.us ইত্যাদি। এই ধরনের ডোমেইন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিনতে পারে না শুধুমাত্র সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য।
আবার আপনি যদি কোন বিশেষ দেশকে টার্গেট করে ডোমেইন নাম কিনতে চান এবং সেই দেশে ব্যবসা করতে চান তাহলে সেই দেশের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে আপনাকে এই ধরনের ডোমেইন কিনতে হবে। এই ধরনের ডোমেইন হল .com.bd/.com.uk/.com.in ইত্যাদি।
এছাড়া বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট থেকে আপনি ফ্রি ডোমেইন নিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে সেই ডোমেইনের পাশে ওয়েবসাইটের নিজস্ব নামও রয়ে যাবে। যেমন বলা যেতে পারে travelwithme.wordpress.com/ travelwithme.blogspot.com ইত্যাদি। এই ধরনের ডোমেইন আপনি চাইলে ব্যবহার করতে পারেন তবে আপনার যদি দীর্ঘ মেয়াদী কোন চিন্তা ভাবনা থাকে তাহলে এই ধরনের ডোমেইন ব্যবহার না করাই ভালো।
ডোমেইন কোথা থেকে এবং কীভাবে কিনবেন ?
ডোমেইন আপনি দেশীয় কোম্পানি থেকে কিনেন অথবা বিদেশি কোম্পানি থেকে ক্রয় করেন আপনি একই ধরনেরই সার্ভিস পেয়ে থাকবেন এবং আপনার মূল্যও লাগবে একই রকম। যদি আপনি বিদেশী কোম্পানি থেকে ডোমেইন কিনতে চান তাহলে namecheap.com অথবা godaddy.com হল সবচাইতে ভালো দুটি ডোমেইন প্রোভাইডার।
আপনার যদি একটি মাস্টার-কার্ড বা বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাংক কার্ড থাকে তাহলে আপনই সেটা দিয়ে খুব সহজেই এই দুইটি ডোমেইন প্রোভাইডারের কাছ থেকে নিজের ওয়েবসাইটের জন্য কিনে নিতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে বর্তমানে অনলাইনে ক্রয় করার জন্য ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ব্যাংক এশিয়া থেকে দুটি ডলার কার্ড নিতে পারবেন। ইস্টার্ন ব্যংক থেকে একুয়া প্রিপেইড কার্ড অথবা লাইফস্টাইল কার্ড আবার ব্যাংক এশিয়া থেকে স্বাধীন কার্ড নিয়ে নিতে পারবেন।
এই কার্ডগুলোর মাধ্যমে আপনই ডোমেইন হোস্টিং ক্রয় সহ অনলাইনে যে কোন ধরনের ডলারের পেমেন্ট করতে পারবেন।
তবে আপনার যদি এই ধরনের কার্ড না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে বাংলাদেশি কোন কোম্পানির শরণাপন্ন হতে হবে। তাদের আপনই বিকাশ অথবা রকেটের মাধ্যমেও ডোমেইন কেনার টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।
তবে উপরল্লোখিত দুটি বিদেশী কোম্পানি ছাড়া অন্য কোন বিদেশী অথবা দেশি যার কাছ থেকেই ডোমেইন কিনতে যান না কেন। অনলাইনে সেই কোম্পানির সার্ভিস সম্পর্কে একটু জেনে নিবেন। যে কোন জিনিস ক্রয় করার আগেই একটু খোঁজ খবর করে নেয়া ভালো এক্ষেত্রে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সাধারণত ডোমেইনের নাম ৮০০-১২০০ এর মধ্যে হয়ে থাকে। তবে কিছু টপ লেভেলের ডোমেইন আছে যেগুলোর দাম অনেকটাই নাগালের বাইরে। এছাড়া বর্তমানে .xyz প্রথম বছরের জন্য মাত্র ১০০ টাকায় কিনতে পারবেন, তবে মনে রাখতে হবে পরবর্তী বছর থেকে আবার আপনাকে সেই ৮০০-১২০০ এর মতই খরচ করতে হবে।
বাংলাদেশি .bd অথবা .bangla ডোমেইন কীভাবে কিনব ?
আপনই .bd অথবা .uk যে দেশেরই ডোমেইনই নিতে জান না কেন, সেক্ষেত্রে আপনার সেই নির্দিষ্ট দেশের সরকার থেকে অনুমোদন নিতে হবে। বাংলাদেশের ডট বিডি ডোমেইন কিনতে হলে আপনার বিটিসিএল অর্থাৎ বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র যেমন টিন, এনআইডি এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হতে পারে আপনার এই ধরনের ডোমেইন যদি কিনতে চান।
এই ধরনের ডোমেইন কেনা খুব ভালো যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় কোন নির্দিষ্ট দেশেই ব্যবসা করার। অথবা আপনই সবাইকে জানাতে চান যে আপনার কোম্পানিটি একটি বাংলাদেশি কোম্পানি এবং এটি বাংলাদেশ থেকে অপারেটর হয়ে থাকে।
হোস্টিং কি ?
ডোমেইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম, এখন আসুন জেনে নেই হোস্টিং কি এবং কেন এটা এত গুরুত্বপূর্ণ। হোস্টিং হল মূলত অনলাইনে একটি নির্দিষ্ট জায়গা, যে জায়গায় আপনি নিজের ডোমেইনটি রাখবেন। ধরুন আপনি একটি দোকান দিতে চাচ্ছেন, এখন দোকানের নাম অর্থাৎ ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করে ফেললেন।
কিন্তু শুধু নাম দিয়ে তো আপনি একটি দোকান চালাতে পারবেন না, তাই না ? এখন আপনাকে সেই দোকান দেয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ক্রয় করতে হবে। আর এই জায়গাকেই হোস্টিং বলা হয়। এই হোস্টিংয়ের মধ্যেই আপনাকে নিজের ওয়েবসাইটটি তৈরি করতে হবে।
আকর্ষণীয় এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
এখন হোস্টিং এর অনেক ধরনের মান রয়েছে যার উপরে নির্ভর করছে ওয়েবসাইটের লোড হওয়ার সময় সহ আরো অনেক কিছু । তাই ওয়েবসাইটের গুনগত মান ধরে রাখার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি ভালো মানের হোস্টিং কিনে নিতে হবে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি বাংলাদেশের অনেকগুলো হোস্টিং কোম্পানির সাথেই কাজ করেছি এবং কোন হোস্টিং কোম্পানির উপরেই আমি সন্তুষ্ট নই।
ডোমেইন আপনি বাংলাদেশি অথবা লোকাল অখ্যাত যে কোন কোম্পানির কাছ থেকেই কিনতে পারেন কিন্তু হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হল একটু দেখেশুনে ভালো মানের হোস্টিং নিন। যাতে করে আপনার ওয়েবসাইটে মানুষ খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই ভিজিট করতে পারে।
অপরদিকে ওয়েবসাইটের এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের ক্ষেত্রেও ওয়েবসাইটের হোস্টিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ওয়েবসাইটের স্পিড এবং লোডিং টাইম ভালো হলে সেই ওয়েবসাইটের এসইও করা অনেকটাই সহজ হয়ে উঠবে। উল্লেখ্য যে আপনার ওয়েবসাইটের যাবতীয় কন্টেন্ট, ছবি এবং ভিডিও এই হোস্টিং এর মধ্যেই রাখা হয়।
হোস্টিং কেনার আগে যে বিষয়গুলো জানা খুবই জরুরী
আপনি যে হোস্টিং কিনতে যাচ্ছেন সেই হোস্টিং প্রোভাইডারের বিভিন্ন প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। ধরুন আপনার যদি শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনি অনেক বড় হোস্টিং কেন কিনবেন ? তবে আবার যদি এমন হয় আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর অনেক বেশি হবে, সেক্ষেত্রে ছোট হোস্টিং কিনলে আপনার ওয়েবসাইটের এত ভিজিটর সেখানে সাপোর্ট করবে না এবং ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যাবে।
তাই আপনাকে কয়টি ডোমেইন এর জন্য হোস্টিং কিনতে হবে সেটা লক্ষ্য রেখে হোস্টিং ক্রয় করুন।
হোস্টিং প্রোভাইডারের ডিস্ক স্পেস, ব্যান্ডউইথ সহ সার্ভারের পারফরম্যান্স সম্পর্কে আগেই ভালো ভাবে জেনে নিন।
হোস্টিং প্রোভাইডার কি আপনার ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যাকয়াপ রাখবে কি না অথবা তাদের কন্ট্রোল প্যানেল অর্থাৎ সিপ্যানেলের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেই।
হোস্টিং কোম্পানি যদি এসএসএল (SSL) প্রোভাইড না করে থাকে তাহলে আপনাকে আলাদা করে এটি কিনতে হবে। বর্তমানে আপনার ওয়েবসাইটের কানেকশন যদি সিকিউর না হয়ে থাকে তাহলে সেটা এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন তেমন একটা ভালো হয় না।
এছাড়া অবশ্যই হোস্টিং কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার সহ যাবতীয় বিষয়ে অনলাইনে রিভিউ দেখে নিন। যদি সবকিছু দেখে শুনে মনে হয় এই কোম্পানি থেকে হোস্টিং ক্রয় করা যাবে তবেই হোস্টিং কিনে নিন।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ
চাকরি কিংবা ব্যবসার বাইরে অনলাইনে আয়ের উপায় সমূহ !
বর্তমানে বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানি হল Hostgator.com, এদের গুনগত মান এবং সার্ভিস কোয়ালিটি একদমই অনন্য। এছাড়া আরো কিছু ভালো ভালো হোস্টিং কোম্পানি রয়েছে যেমন, ব্লু হোস্ট, গোড্যাডি ইত্যাদি।
আর ক্রয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা বলতে হয়, আর সেটি হল আপনাকে সবগুলো ওয়েবসাইটেই পেমেন্ট করতে হবে ডলারের মাধ্যমে। তাই ডলারে পেমেন্ট করা যাবে এমন কার্ড দিয়েই শুধুমাত্র এগুলো কিনতে পারবেন।
আশাকরি, ডোমেইন এবং হোস্টিং সম্পৃক্ত আপনার যাবতীয় কৌতূহল এই আর্টিকেল মেটাতে পেরেছে। আর আমাদের এই গাইডলাইনটি মেনে যদি আপনি ডোমেইন এবং হোস্টিং এর ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রতারণার শিকার হতে হবে না।
লেখক পরিচিতিঃ
Digital Marketing Expert | SEO Expert | Digital Marketing Trainer |
PPC Expert | Social Media Specialist | Consultant