ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এক অনন্য এবং নতুন একটি ক্ষেত্রের নাম হল এই ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং । আর এই আর্টিকেলে আমরা আলাপ করতে যাচ্ছি সব চাইতে কার্যকরী এই বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যম সম্পর্কে। তবে তার আগে আসুন জেনে নেই “ ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং ” বলতে আদতে কি বুঝানো হয় ?
ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং কি ?
ধরুন একজন বিশ্ব বিখ্যাত ফটোগ্রাফার, তার ফেসবুকে মিলিয়ন লাইক আবার অপরদিকে তার ইউটিউব ভিডিওতে প্রতিদিন মিলিয়ন ভিউ হয়। এখন নিকন নামক ক্যামেরা ব্র্যান্ডটি চাইল সেই ফটোগ্রাফার একটা ভিডিওতে নিকন কোম্পানির নতুন একটি ক্যামেরা সম্পর্কে সে যাতে সবাইকে বলে দেয় এবং তার বিনিময়ে কোম্পানি তাকে একটি ভালো পরিমাণ অর্থ প্রদান করল।
আকর্ষণীয় এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
বুঝতেই পারছেন, এত ভিউ এবং এত লাইক সহকারে একজন ব্যক্তি যখন তার ফেসবুক এবং ইউটিউবে কোটি মানুষকে বলে দেয় নতুন এই ক্যামেরাটির কথা। তখন রাতারাতি দেখা যায় নিকন কোম্পানির ক্যামেরাটি একদিনের মধ্যেই লাখের উপর বিক্রি হয়ে যায়। একেই বলা হয় ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং ।
যারা এই ধরণের ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং করেন অথবা ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটার হতে চান তাদের জন্য এই আর্টিকেল, যাতে করে নিত্য নতুন ট্রেন্ডের সাথে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন।
ডিসিয়াই নামক একটি কোম্পানি এই ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের নিয়ে কিছু তথ্য আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আসুন এক নজরে দেখে নেই সেই তথ্যগুলোঃ
১। যারা ছোটখাটো ইনফ্লুয়েন্সার তাদের উপর বর্তমানে আকর্ষণ বেশি কাজ করে
২। যে কোন একটি গল্প বলার ধরণের মধ্য দিয়ে যদি ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং করা হয় তাহলে সেটা মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে
৩। বিভিন্ন ধরণের প্লাটফর্ম ব্যবহার করলে তড়িৎ ফলাফল পাওয়া যায়
৪। অন্যান্য কন্টেন্ট থেকে ভিডিও একটু দ্রুত ভাইরাল হতে পারে
এছাড়া আরো কিছু তথ্য নিচে দেয়া হল, যেগুলো দেখে আপনি কিছুটা অবাক হলেও এই ট্রেন্ডগুলো যদি মানিয়ে চলতে পারেন তাহলে অবশ্যই ২০২০ সালের ইনফ্লুয়েন্স মার্কেট আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে সফলতা নিয়ে !
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ফলোয়ার কীভাবে বৃদ্ধি করবেন ?
বর্তমান আধুনিক এবং ডিজিটাল সময়ে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং হল যে কোন কোম্পানির জন্য সফলতার অন্যতম একটি চাবিকাঠি। যে কোন ধরণের প্রচার প্রচারণার জন্য এই ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিংকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে অন্যান্য মার্কেটিং উপায় থেকে এই মার্কেটিং থেকেই বেশি সফলতা পাওয়া যায়।
একটি অবাক করা তথ্য হল বিগত তিন বছরে “ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং” কথাটি লিখে গুগুল সার্চ দেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিং কতটা জনপ্রিয় একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একটি গবেষণা অনুযায়ী দেখা গেছে ২০২০ সালে এই ইনফ্লুয়েন্স মার্কেট প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি মার্কেটে পরিণত হতে যাচ্ছে।
২০২০ সালে ছোটখাটো ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকবে প্রবল
এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্টদের মতে একজন বিশাল আকারের ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য অথবা কোম্পানি প্রমোট না করে বরং অনেকগুলো ছোট ছোট ইনফুয়েন্স মার্কেটারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করলে সেখান থেকে বেশি ফলাফল পাওয়া যায়। আর তাই বর্তমানে বড় বড় কোম্পানিগুলো নিজেদের প্রচার প্রসারণের জন্য এই পন্থায় অবলম্বন করছে।
আর তাই দেখা যাচ্ছে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটিংয়ের প্রায় ৬১ শতাংশ অংশ দখল করে আছে এমন ছোট ছোট ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটাররা।
উল্লেখ্য যে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের নিজস্ব ফ্যান ফলোয়ারের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে, নিম্নে সে বিষয়ে বর্ণনা করা হলঃ
>> ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সারদের ফ্যান ফলোয়ার থাকেঃ এক হাজার থেকে দশ হাজার পর্যন্ত।
>> মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সারদের ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যাঃ দশ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজারের মত
>> মিড-টায়ার ইনফ্লুয়েন্সারদের ফ্যান ফলোয়ার থেকে প্রায়ঃ পঞ্চাশ হাজার থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত
>> ম্যাক্রো ইনফ্লুয়েন্সার বলা হয়ে যাদের ফ্যান ফলোয়ারঃ পাঁচ লাখ থেকে দশ লাখ পর্যন্ত
>> মেগা ইনফ্ল্যেন্সার বলা হয় যাদের ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যা দশ লাখের থেকেও বেশি
আর এদের মধ্যে যে সকল ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যা আড়াই হাজার থেকে দশ হাজারের মধ্যে তাদের মাধ্যমেই বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করলেই বেশি সুফল পাওয়া যায়।
গল্পের আকারে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা
এই ট্রেন্ডটি বর্তমানে সবচাইতে বেশি পরিচিত এবং এর থেকে ফলাফল পাওয়া যায় একটু বেশিই। তবে এর জন্য যে বিষয়টি আপনার মাথায় রাখতে হবে সেটা হল গল্প এবং গল্প বলার যে ভঙ্গী উভয়েই এমন ভাষায় করতে হবে যাতে করে সেটা খুব সহজেই আপনার ফ্যান ফলোয়াররা বুঝে নিতে পারে।
আর এই ধরণের গল্পগুলোর মধ্যে যদি একটু সামাজিক আবেগ মিশ্রণ করা যায় তাহলে সেই বিজ্ঞাপনে সব চাইতে বেশি সফলতার দেখা মিলবে।
আর তাই একটি গবেষণায় উঠে এসেছে বর্তমানে ৯২ শতাংশ ব্র্যান্ডগুলোই যে কোন একটি গল্পের মাধ্যমেই নিজেদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
বিভিন্ন ধরণের প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম অথবা টুইটার সবগুলো প্ল্যাটফর্মেরই একটি নিজস্ব ভাব ভঙ্গী আছে এবং তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারলে সেখানেও বেশ ভাল পরিমাণ ফ্যান ফলোয়ার পাওয়া যেতে পারে।
আর তাই বর্তমানে ভালো ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটাররা শুধুমাত্র একটি প্ল্যাটফর্মেই সীমাবদ্ধ থাকেন না বরং নিজেদেরকে আরো বেশি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকেন।
বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় মূলত ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের মধ্যে প্রায় ৭৪ শতাংশই ইন্সটাগ্রামের দিকে একটু বেশি ঝুঁকে আছেন।
আর আপনিও যদি একজন সফল ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটার হতে চান তাহলে এই বর্তমান ট্রেন্ডের স্রোতে নিজের গা ভাসিয়ে দিতেই হবে।
এছাড়া দেখা যায় টুইটারেও প্রচুর পরিমাণ ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের আনাগোনা। কেননা ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশ মার্কেটাররাই টুইটারে বেশ কার্যকরী অবস্থান রেখে চলেছেন।
এছাড়া ব্লগিংয়ের মাধ্যমেও প্রায় ৪৫ শতাংশ ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটাররা কাজ করে যাচ্ছেন।
অপরদিকে ফেসবুকের ক্ষেত্রে দেখা যায় ২৫ শতাংশ ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের আনাগোনা রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মটিতে।
আবার যদিও অনেক ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের উৎপত্তি ফেসবুক এবং ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে হলেও তারা পরবর্তীতে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের দিকে প্রবল আকারে ঝুঁকে গেছেন। আর তাই বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদের মধ্যে কেবল ১৬ শতাংশ মার্কেটারদেরই দেখা যায় ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম টিতে।
উপরোল্লিখিত প্ল্যাটফর্মগুলো ছাড়াও পিনটারেন্সট এবং টিকটক বর্তমানে বেশ ভালো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তাই ধারনা করা হচ্ছে ইনফ্লুয়েন্স মার্কেটারদেরও একটা বড় অংশ এদিকে ঝুঁকে পড়বেন।
পিন্টারেস্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতি মাসে প্রায় আড়াইশ মিলিয়ন মানুষ এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে থাকেন। অপরদিকে টিকটক প্ল্যাটফর্মটি বর্তমানে এতই জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে যে ১.১ বিলিয়ন মানুষ ২০১৯ সালে টিকটক এপ্লিকেশনটি নিজেদের মোবাইলে, ট্যাবে ইন্সটল করেছেন।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সমূহ এবং সেগুলোর কন্টেন্ট ২০২০ সালে কেমন হবে ?
এছাড়াও যেখানে পিনটারেস্ট প্ল্যাটফর্মটি ই-কমার্স সাইটের জন্যই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সেখানে টিকটকে মূলত তরুণ তরুণীদের ভিড়ই বেশি দেখা যায়।
আর তাই টিকটকের ক্ষেত্রে যে কোন একজন মানুষের ব্যক্তিগত ইনফ্লুয়েন্স অর্থাৎ ফ্যান ফলোয়ার বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। কেননা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে টিকটক ব্যবহারকারিদের মধ্যে ৪১ শতাংশ ব্যবহারকারীদের বয়স ১৬ থেকে ২৪ এর মধ্যে।
বর্তমানে অন্যান্য কন্টেন্ট থেকে ভিডিও কন্টেন্টকে খুব সহজে ভাইরাল করা যায় ।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বর্তমানে তাকালে দেখা যায়, অন্যান্য কন্টেন্টগুলো থেকে ভিডিও কন্টেন্টগুলোই মানুষ বেশি দেখছে। এমনকি লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের সংখ্যাও ভিডিওতে তুলনামূলক ভাবে একটু বেশিই হয়ে থাকে।
এছাড়াও দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচুর লাইভ ভিডিও করছে। আর এই ধরণের লাইভ ভিডিওতে তারা নিত্য বেশ ভালো ভালো অফার দিয়ে থাকে। ফলাফল স্বরূপ দেখা যায় এই ধরণের লাইভ ভিডিওগুলোর প্রতিও ভোক্তাদের আগ্রহের কোন কমতি থাকে না।
আর এই ভিডিও কন্টেন্টের মধ্যে মোশন-গ্রাফিক্স সহ ভালো সিনেমাটোগ্রাফি দিয়ে কাজ করে ভিডিও তৈরি করলে সেই ভিডিওর প্রতি মানুষের আকর্ষণ অন্যান্য ভিডিওর তুলনায় অনেক বেশি থাকে।
ভিডিও প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে ছোট ছোট ভিডিওর জন্য জনপ্রিয়
প্ল্যাটফর্ম গুলো হচ্ছে স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম। আর অপরদিকে বড় বড় ভিডিওগুলোর জন্য জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হল আইজিটিভি, ইউটিউব এবং ফেসবুক।
উল্লেখ্য যে, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে বর্তমানে ভিডিও কন্টেন্ট দিয়ে ১৩৫ শতাংশ বেশি সফলতা পাওয়া যায় অন্যান্য ছবি অথবা লেখা কন্টেন্ট থেকে। এছাড়াও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে দেখা যায় ব্যবহারকারীরা অন্যান্য কন্টেন্টের তুলনায় ভিডিও কন্টেন্টে সময় দিচ্ছেন তিনগুণ বেশি।
লেখক পরিচিতিঃ
Digital Marketing Expert | SEO Expert | Digital Marketing Trainer |
PPC Expert | Social Media Specialist | Consultant