আপনি যেভাবে যেই বিজ্ঞাপনই দেন না কেন, বিজ্ঞাপন যদি গ্রাহককে আকর্ষণ না করে তাহলে সেই বিজ্ঞাপন থেকে খুব একটা ভালো ফলাফল আশা করা যায় না। আর ঠিক একই রকম ভাবে গুগুলে যখন আপনি পিপিসি বিজ্ঞাপন দিবেন তখন আপনাকে অল্প কথার মধ্যেই বিজ্ঞাপনের মূল বিষয়টিকে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
ভোক্তা সম্পর্কে আপনি যত বেশি জানবেন ততই সুন্দর ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন। গুগুলের বেশ কিছু টুলস রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি এনালাইসিস করতে পারবেন।
যত ভালো ভাবে সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভাবে আপনি বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন ততই আপনার বিজ্ঞাপন বেশি কার্যকরী হয়ে উঠবে। গুগুলে যখন বিজ্ঞাপন দেয়া হয় তখন গুগুল কিন্তু আপনাকে খুব অল্প একটু জায়গা দিবে লেখার জন্য।
সেই অল্প জায়গার মধ্যেই কীভাবে আরো সুন্দর করে নিজের বিজ্ঞাপনকে উপস্থাপন করবেন সেটা জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
গুগুলে বিজ্ঞাপনে টেক্সট বোল্ড করার মাধ্যমেও আপনি বেশ সুন্দর ভাবে বিজ্ঞাপন প্রদান করতে পারবেন। এছাড়া আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের দশটি এমন উপায়ের কথা বলব, যার মাধ্যমে আপনি খুব সুন্দর ভাবে নিজের পিপিসি ক্যাম্পেইনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। আসুন তাহলে দেখে নেই সেই দশটি চমৎকার উপায়ের কথা, যে উপায়গুলো আপনার বিজ্ঞাপনের ধারণাকেই বদলে দিতে পারেঃ
১। মানুষ কোন ধরণের বিজ্ঞাপন দেখতে চায় সেটা জেনে নিন
অনেকেই বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় শুধুমাত্র নিজেদের সম্পর্কেই বেশি করে লেখার চেষ্টা করেন। হ্যাঁ! এমন করাটাই খুব স্বাভাবিক। তবে এভাবে নিজের সম্পর্কে একটানা লেখার ক্ষেত্রে আপনাকে একটু চতুরতা অবলম্বন করতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে যে ভোক্তারা আপনার কাছে এসেছে বা আপনার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করছে আপনাকে জানার জন্য নয় বরং তাদের হয়ত কিছু প্রয়োজন আর সেজন্যই তারা গুগুলে সার্চ দিয়েছে।
আর তাই ভোক্তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবুন, তারা কেন সার্চ দিয়েছে সেটা নিয়ে ভাবুন। আর সেভাবেই গুগুলে বিজ্ঞাপন দিন, তাহলে দেখবেন আপনার বিজ্ঞাপন থেকে অনেক বেশি ক্লিক আসছে এবং সেই বিজ্ঞাপন মানুষ বেশ পছন্দ করছে।
২। বিজ্ঞাপনে অডিয়েন্সকে নিয়ে লিখুন
আপনি সরাসরি অডিয়েন্সকে উদ্যশ্য করে লিখুন। সাধারণ কোন কথা লেখার আগে বিজ্ঞাপনে যদি “আপনি বা তুমি” সম্বোধন করে লিখতে পারেন তাহলে বিজ্ঞাপনটি আকর্ষণীয় লাগবে। যেমন ধরুন আপনি যদি জুতা নিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে চান তাহলে “আরামদায়ক হাঁটার জন্য জুতা” না লিখে বরং লিখতে পারেন, “আপনার আরামদায়ক হাঁটার জন্য এই জুতা”। এভাবে লিখলে সেটা সরাসরি অডিয়েন্সকে টার্গেট করে লেখা হবে এবং অডিয়েন্স বেশ পছন্দ করবে।
৩। অডিয়েন্সের আবেগ বুঝতে চেষ্টা করুন
যে কোন বোরিং লেখা না লিখে বরং অডিয়েন্সের আবেগ অনুভূতি বুঝে সেই অনুযায়ী যদি লিখতে পারেন তাহলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠবে। মানুষের আকর্ষণীয় যায়গাটি আপনাকে বুঝতে হবে এবং এমনভাবে লিখতে হবে যাতে করে মানুষের আবেগের যায়গাটি স্পর্শ করা সম্ভব হয়। যেমন ধরুন আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মিষ্টি বিক্রয় করেন তাহলে লিখতে পারেন, “ডায়াবেটিকে আক্রান্ত বাবার জন্য শেষ কবে মিষ্টি কিনেছিলেন, মনে আছে কি?”। এভাবে লিখতে পারলে ভোক্তাদের আবেগের জায়গাটিতেও স্পর্শ করতে পারবেন।
৪। তথ্য এবং উপাত্ত নিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন
বিভিন্ন ধরণের উপাত্তের উপর ভিত্তি করে যদি আপনি বিজ্ঞাপন দিতে পারেন তাহলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠবে বলেই বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞদের ধারণা। যেমন ধরুন আপনি যদি একই ধরণের ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মিষ্টি বিক্রয় করে থাকেন তাহলে বিজ্ঞাপনের লিখতে পারেন, “দশ হাজার ডায়াবেটিক রোগীদের মিষ্টি বাসনা পূরণ করতে এসেছি আমরা”।
এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন
উল্যেখ্য যে রিপোর্ট এনালাইসিস করে সেই তথ্য অনুযায়ী বিজ্ঞাপনকে আবার ডেটা ড্রিভেন মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে।
৫। ভোক্তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানুন আর তার সমাধান দিন
ধরুন ঢাকার বাসিন্দাদের একটা কমন সমস্যা হল এখানে তাজা মাছ বা নদীর মাছ কম পাওয়া যায়। আর পাওয়া গেলেও সেটার দাম হয় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর আপনি যদি মাছ নিয়ে কাজ করেন, তাহলে আপনি লিখতে পারেন, “নদীর মাছ পাচ্ছেন না? কম খরচে কিনতে চাইলে আমাদের সাথে থাকুন।”
এভাবে লিখতে মানুষ নিজেদের সমস্যার সাথে আপনার বিজ্ঞাপনকে রিলেট করতে পারবে এবং বেশি করে ক্লিক করবে। পরবর্তীতে আপনার অফার যদি তাদের ভালো লাগে সেখান থেকে ক্রয়ও করতে পারে। আর তাই আপনি যে পণ্যটি বিক্রয় করছেন, সেই পণ্য রিলেটেড কি কি সমস্যায় মানুষ ভুগতে থাকে, সেটাকে জানুন আর চেষ্টা করুন আপনার পণ্যটি এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান প্রদান করার জন্য।
৬। গুগুল নির্ধারিত সবগুলো জায়গা ব্যবহার করে লিখুন
গুগুল আপনাকে বিজ্ঞাপন লেখার জন্য দুটো আলাদা জায়গা দিবে। হেডলাইন লেখার জন্য ৩০ ক্যারেক্টার এবং ডিসক্রিপশন লেখার জন্য ৮০ ক্যারেক্টার জায়গা। হ্যাঁ! শুনতে হয়ত অনেক কম মনে হলেও এই যায়গাগুলোর সর্বচ্চ ব্যবহার আপনাকে করতে হবে।
আপনি যদি ৮০ ক্যারেক্টারের জায়গায় ৬০ ক্যারেক্টার লিখেই বিজ্ঞাপন দিয়ে দেন তাহলে বিজ্ঞাপনে আপনি হয়ত বেশ কিছু তথ্য মিস করে ফেলতে পারেন। আর তাই এমন ভাবে বিজ্ঞাপন দিবেন যাতে করে আপনার জন্য গুগুল নির্ধারিত জায়গার সম্পূর্ণ ব্যবহার হতে পারে।
৭। আপনি সবার থেকে কেন আলাদা সেটা বলুন
বিজ্ঞাপন দেয়ার আগে নিজেকেই কয়েকটি প্রশ্ন করুন—
** আপনার পণ্য বা ব্যবসা কেন আর সবার থেকে আলাদা?
** আপনার পণ্য কেন গ্রহণযোগ্য হবে?
** আপনার পণ্যের উপর কি কোন স্পেশার অফার দিচ্ছেন?
** আপনার ব্র্যান্ডে এমন কি আছে যেটা অন্যদের নেই?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে একটু ভাবুন এবং সেই মূলকথা আপনার বিজ্ঞাপনে দেয়ার চেষ্টা করুন। আর সবার থেকে নিজেকে একটু আলাদা ভাবে উপস্থাপন করতে পারলে দেখবেন মানুষ অনেক বেশি পছন্দ করছে।
৮। স্থানীয় ভাবে বিজ্ঞাপন দিন
মানুষ সাধারণত তার আশেপাশের অর্থাৎ ধরা ছোঁয়ার মধ্যে আছে এমন কোন পণ্য বেশি পছন্দ করে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি একেক এলাকার জন্য একে ভাবে বিজ্ঞাপন দেন তাহলে সেটা বেশি ফলাফল প্রদান করবে। যেমন ধরুন আপনি যদি পুরো বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন প্রদান করতে চান তাহলে ঢাকার জন্য আলাদা, খুলনার জন্য আলাদা এভাবে বিজ্ঞাপন তৈরি করুন।
স্থানীয় কোন কিছুকে যদি গুরুত্ব প্রদান করতে পারেন তাহলে সেটা আপনার জন্য অনেক চমৎকার একটি বিষয় হয়ে উঠবে। মানুষ আপনাকে অনেক বেশি আপন মনে করবে এবং স্থানীয় ভাবেও আপনার বিজ্ঞাপনে বেশি ক্লিক আসতে থাকবে।
৯। স্পষ্ট এবং জোরালো ভাষা ব্যবহার করুন
হতে পারে, এমনটা হয়ে আসছে বা এই ধরণের কথা ব্যবহার না করে বরং “হবে” লিখলে আরো বেশি চমৎকার শোনাবে। যেমন ধরুন আপনি হাঁটার জন্য জুতা বিক্রয় করবেন এখন যদি আপনি বিজ্ঞাপন দিন, “হাঁটার অভিজ্ঞতা আরো সুন্দর হতে পারে”, তাহলে সেটা সুন্দর দেখাবে না।
বরং আপনি যদি লিখেন যে আপনার হাঁটার অভিজ্ঞতাকে আরো অনেক বেশি সুন্দর করবে এই জুতা তাহলে সেটা ভোক্তাদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে হবে।
১০। ছোট ছোট বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথমে ট্রাই করুন
আপনি যাই লিখবেন সেটাই ভোক্তা গ্রহন করবে অথবা কোন অসাধারণ বক্তব্য ভোক্তা গ্রহণ করবে সেই গ্যারান্টি আদতে কেউ দিতে পারবে না। আপনি বরং ছোট ছোট খরচে বেশ কিছু আলাদা বা ভিন্ন কথা লিখে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেখুন যে কোন ধরণের কথা বা লেখার স্টাইল আপনার পণ্যের সাথে মানাচ্ছে এবং ভোক্তাও সেটা সাদরে গ্রহণ করছে।
এভাবে আপনি যদি সুন্দর ভাবে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন তাহলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠবে।
পরিশেষে এটা বলা যেতে পারে যে, পিপিসি ক্যাম্পেইন পুরোপুরি একটি বিজ্ঞানের মত এবং এতি নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা করতে হবে। আপনি যত বেশি এই বিজ্ঞাপন নিয়ে গবেষণা করবেন তত বেশি আপনার বিজ্ঞাপন অন্যান্যদের থেকে বেশি কার্যকর হয়ে উঠবে। হয়ত আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার, ক্লায়েন্টদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন অথবা আপনি নিজের জন্যই বিজ্ঞাপন দেন।
সে যাই হোক না কেন, আমাদের এই পিপিসি বা গুগুলে বিজ্ঞাপনের উপর এই সিরিজটি আপনার যথেষ্ট উপকারে আসবে। আমাদের এই সিরিজে প্রকাশিত বিগত পর্বগুলো হলঃ
· পিপিসি বা গুগুলের ক্লিক ভিত্তিক বিজ্ঞাপনে কোয়ালিটি স্কোর কীভাবে বৃদ্ধি করবেন?
· পিপিসি ক্যাম্পেইনে Click-Through Rate বা CTR কি এবং কেনই বা এটা এত গুরুত্বপূর্ণ?
· কিওয়ার্ড কি এবং পিপিসি ক্যাম্পেইনে কীভাবে কিওয়ার্ড কাজ করে?
· এড গ্রুপ কি এবং কীভাবে এড গ্রুপের মাধ্যমে পিপিসি বিজ্ঞাপনকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়?
· পিপিসি বা ক্লিক ভিত্তিক বিজ্ঞাপনের বাজেট নির্ধারন এবং বিডিং (Budget and Bidding on PPC)
· অডিয়েন্স টার্গেটিং (Audience Targeting)—পিপিসি (PPC) বা ক্লিক ভিত্তিক বিজ্ঞাপন
· বিশ্বসেরা যে ৮টি নেটওয়ার্কে পিপিসি বা ক্লিক ভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রদান করতে পারবেন
· পিপিসি PPC (Pay per click) কি এবং এই ক্লিক ভিত্তিক সার্চ মার্কেটিং কীভাবে কাজ করে?